মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী চরম দুর্দশায় আছেন। এখন দেশে ফেরার পথ খুঁজছেন তাদের মধ্যে অনেকেই।
এ ব্যাপারে দেশটির রাজধানী বৈরুতের একটি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত টিটু জানিয়েছেন, তিনি আগে মাসে ৯০০ ডলার আয় করতেন। ২০১৯ সালে অর্থনৈতিক সংকট শুরুর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি তাকে লেবানিজ পাউন্ডে বেতন দিতে শুরু করে।
তিনি জানান, গত বছরের নভেম্বরে তাকে ২ ধরনের মুদ্রায় বেতন দিতে রাজি হন নিয়োগকর্তা। তিনি প্রতি মাসে ৪০০ ডলার ও ৭ লাখ ৫০ হাজার লেবানিজ পাউন্ড পাচ্ছিলেন।
টেলিফোনে টিটু আরও জানান, কিন্তু আপনি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কোনো মার্কিন ডলার পাবেন না। ৭ লাখ ৫০ হাজার লেবানিজ পাউন্ড কালোবাজার থেকে ডলার করতে গেলে ৫০০ ডলারের পরিবর্তে ৪০ থেকে ৫০ ডলার পাওয়া যায়।
তার মতো হাজারো বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছেন মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে। কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা মাসিক খরচ পর্যন্ত জোগাতে পারছেন না এবং দেশেও পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতে পারছেন না।
বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের সূত্রে জানা গেছে, মোট ১ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসীর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার অনিবন্ধিত কর্মী আছেন।
এ ব্যাপারে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ মিশনের আয়োজন করা বিশেষ প্রত্যাবর্তন প্রকল্পের আওতায় ১৪ হাজারেরও বেশি অনিবন্ধিত অভিবাসী কর্মী দেশে ফিরেছেন।
অনিবন্ধিত কর্মীসহ আরও অনেকেই এখন দেশে ফিরে আসার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন অভিবাসী কর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অনিবন্ধিত বাংলাদেশি কর্মী জানিয়েছেন, তিনি দেশে ফিরতে চান। কিন্তু ফ্লাইটের টিকিট কেনার মতো অর্থ জোগাড় করতে পারেননি। এ কারণে তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রত্যাবর্তনের জন্য নিবন্ধনও করতে পারেননি।
গতকাল লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রিয়াদ সালামেহ জানিয়েছেন, তার দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু করার জন্য ও দ্রুত শেষ হতে থাকা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল করতে অংশীদারদের কাছ থেকে ন্যুনতম ১ হাজার ২০০ কোটি থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন।
একটি নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে লেবানন। যাকে আধুনিক কালে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে অভিহিত করেছে বিশ্বব্যাংক।
আনন্দবাজার/ টি এস পি