শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিল্প বিকাশে বাধা পিতল ‘রফতানি’

  • রফতানির নামে বিদেশে পাচার
  • চলতি বছরেই ভাঙা হয়েছে বিশ্বের ৩৪ শতাংশ জাহাজ
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর প্রায় তিন হাজার টন স্ক্র্যাপ পিতল ও তামা পাচার হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ১০ দেশে। বেশি লাভের লোভে জাহাজ ভাঙা পিতলের সঙ্গে দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত পিতলও।

জাহাজ ভাঙায় বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিশাল এলাকায় নিয়ে গড়ে উঠেছে এ শিল্প। সেখানে বিশ্বের প্রায় ৩৪ শতাংশ জাহাজ ভাঙা হয়েছে চলতি বছরে। জাহাজ ভাঙার পর জাহাজের প্রপেলর, পাইপ, অন্যান্য যন্ত্রাংশ থেকে তামা ও পিতল বের হয়। সেই তামা বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সাইজ করে কেটে রফতানি করে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

পরিবেশের জন্য ঝুঁকি সত্ত্বেও দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটনো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জাহাজ ভাঙার অনুমতি দেয় সরকার। পরিবেশবাদীদের তীব্র চাপ উপেক্ষা করে যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য বিশ্বের আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন হিসেবে বদনাম নিতে হয়েছে, তার সুফল ভোগ করছে হাতে গোনা কয়েকজন পাচারকারী। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে বেশি কিছুদিন ধরে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ পিতল ও তামা পাচার হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ১০টি দেশে।

চট্টগ্রাম থেকে প্রতি কনটেইনারে ২০ টন করে পিতল রফতানি হয়। জাহাজ ভাঙা শিল্পের পিতলকে ঘিরে দেশের চাহিদা মেটাতে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠে বাথরুম ফিটিংস কারখানা। এসব কারখানায় লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। দেশের অব্যাহত উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাঁচ শতাধিক কারখানায় বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদিত হওয়ায় দেশ বৈদেশিক মুদ্রা খরচের কবল থেকে রক্ষা পায়, এসব কারখানার ভ্যাট-ট্যাক্স থেকে দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুনঃ  শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে ৬ পদক্ষেপ

তবে তুলনামূলক বেশি দামের কারণে রফতানির নামে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে জাহাজ ভাঙা শিল্পের পিতল। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে দেশে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো। এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের মানুষকে বিদেশ থেকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে হবে, সরকারেরও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থমকে যাবে। প্রতিদিন দেশের কারখানাগুলোতে প্রায় ৫০ টন পিতলের চাহিদা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে ও ফেরিওয়ালাদের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ টন পিতল সংগৃহীত হয়। বাকিটা পূরণ হতো জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে।

ঢাকার নলখোলা, বিসিক, মিডফোর্ড, বেচারাম দেওড়ি, নয়া বাজার, ধোলাইপাড়, ধোলাইখালসহ বিভিন্ন এলাকায় পিতলের হাজারখানেক স্থানীয় ক্রেতা রয়েছেন। ডলারের দামের ওপর নির্ভর করে পিতলের বাজারদর। গত বছর এ সময় দেশের বাজারে পিতলের দাম কেজি প্রতি ৩২০ টাকা থাকলেও এবার তা ৪৯০ টাকা কেজি। কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি, ফলে কারখানা মালিকরা আস্তে আস্তে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। দেশে গড়ে ওঠা পিতলনির্ভর কারখানার মালিকরা আগে দেশের চাহিদা পূরণ করার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি তুলে আসছেন। তারা বলেন, সহনশীল দামে পিতল পাওয়া গেলে দেশে গড়ে ওঠা বৈদ্যুতিক তার, বাথরুম ফিটিংস ও ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরির কারখানাগুলো আরও সৃমদ্ধ হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বাড়লেই কয়েকজন রফতানিকারক বেশি লাভের লোভে জাহাজ ভাঙা পিতলের সঙ্গে স্থানীয় বাজার থেকেও সংগৃহীত পিতল দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কারখানা চালু রাখতে চড়া দামে পিতল ক্রয় করে কম দামে পণ্য করতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। লাগাতার ক্ষতির মুখে পড়ে অধিকাংশ বাথরুম ফিটিংস কারখানা বন্ধের পথে।

আরও পড়ুনঃ  সিরামিক রফতানি ৭০% কমেছে

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন