ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাওয়াদে চাঁদপুরে ৭৮৭২ হেক্টরের ফসলের ক্ষতি

জাওয়াদে চাঁদপুরে ৭৮৭২ হেক্টরে ফসলের ক্ষতি

ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টিপাতে চাঁদপুর জেলায় ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানাবৃষ্টিতে জেলার দু’টি সেচ প্রকল্প এলাকাসহ আশপাশের আবাদি জমির আলু, বীজতলা, গম, সরিষা ও পেঁয়াজ চাষের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আলু আবাদের জমি তৈরী করে কৃষকরা এখন বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়েছেন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে ৭৮৪২ হেক্টর জমির প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ৩ দিনের টানাবৃষ্টিতে চলমান বিভিন্ন ফসলের ১০ হাজার ১শ’ ৬৩ হেক্টর জমির মধ্যে ৭৮৭২ হেক্টর জমির প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বোরো বীজতলা ১৫২১ হেক্টর, আলু ১৪৮৫ হেক্টর, সরিষা ১৫৪৬ হেক্টর, গম ৩৭ হেক্টর, পেঁয়াজ ১৩৪ হেক্টর, মরিচ ১৬৫ হেক্টর, অন্যান্য ৭৬৪ হেক্টর এবং শীতকালীন সব্জি ২১৯০ হেক্টর।

চাঁদপুর জেলায় ‘মেঘনা ধনাগোদা’ ও ‘চাঁদপুর সেচ প্রকল্প’ নামে দেশের অন্যতম দু’টি সেচ প্রকল্প। এর মধ্যে একটি সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এবং অপরটি মতলব উত্তর উপজেলায়। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘুরে দেখাগেছে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও তার আশপাশে ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ফসলি জমিগুলোতে বেশিরভাগ আলু, বীজতলা ও শীতকালীন শাকসব্জির জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বীজতলার জমিগুলোর জলাবদ্ধা নিরসনে কাজ করতে দেখাগেছে কৃষকদেরকে। অনেক চাষি আলু আবাদের জন্য জমিগুলো প্রস্তুত করেছেন। ওইসব জমিতে এখন পানি জমে আছে। আমন ধান কর্তণের শেষ সময় হলেও অনেক কৃষক কাটতে পারেনি। সেসব জমিতে এখন হাটু পরিমাণ পানি এবং ধানগুলো পানির নিচে।

সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নিজ গাছতলা গ্রামের কৃষক শামছল খান, মফিজ উদ্দিন ও রাসেল গাজী জানান, আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে লাগানো সম্ভব হয়নি। জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারণ চলতি বছর ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জমি চাষাবাদের খরচ বেড়েছে প্রতি ৬ শতাংশে ১৫০ টাকা। এখন পানি জমে আছে, নতুন করে আবার জমি প্রস্তুত করতে হবে। একই ইউনিয়নের সোবহান গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক খান জানান, তিনি আমন ধানের খড় শুকিয়ে ধান কর্তন করবেন চিন্তা করে অপেক্ষা করছিলেন। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তার আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব জমিতে অনেকে আলু আবাদ করবেন। তবে এখন শঙ্কা রয়েছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদী রামপুর গ্রামের কৃষক রফিক হাফেজ জানান, তাদের মাঠে কমপক্ষে ১০ জন কৃষকের আমন ধান টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ সৃষ্টি হয়ে পানির নীচে। বিশেষ করে ইব্রাহীম পাটওয়ারীর জমির আমন ধান বেশী নষ্ট হয়েছে। তার বিআর ২৮ বীজতলা পানির নীচে। সকাল থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান জানান, ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে চাঁদপুর জেলায় ১০ হাজার ১শ’ ৬৩ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ৭ হাজার ৮শ’ ৪২ হেক্টর জমি ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃষকধরে সব ধরণের সহায়তার চেষ্টা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন