শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভেজাল তেলে আরও ১০০ দিন

ভেজাল তেলে আরও ১০০ দিন
  • ২০২২ সালের ১৭ মার্চ থেকে খোলা বিক্রি বন্ধ
  • উৎপাদন ২২ লাখ টন, খোলা তেল বিক্রি ৬৫ ভাগ

বাজারের সব খোলা ভোজ্য তেলে ভেজালের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। দেশের আটটি বিভাগ থেকে ভোজ্যতেলের নমুনা পরীক্ষা করে এমন প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, বাজারে ভোজ্যতেল খোলা ও বোতলজাত করে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ তেল বিক্রি হয় খোলা। এই খোলা তেল আবার সয়াবিন ও পাম তেল হিসেবে বিক্রি হয়। তবে সয়াবিন ও পাম তেল আলাদা নামে বিক্রি হলেও শুধু সয়াবিন বা শুধু পাম তেল হিসেবে কোনো তেল পাওয়া যায়নি। সবই ছিল সয়াবিন ও পাম তেলের মিশ্রণ।

যদিও গত ২৬ নভেম্বর ভোজ্য তেল মিল মালিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে খোলা ভোজ্য তেল বিক্রি বন্ধে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাজারের ভোজ্য খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

এর মধ্যেই সারাদেশের আট বিভাগ থেকে ভোজ্য তেলের সংগ্রহ করা নমুনা নিয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, সংগ্রহ করা নমুনা তেলে ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এই তেলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও আলাদা হয়। নমুনা পরীক্ষায় ফ্যাটি অ্যাসিডের যে পরিমাণ পাওয়া গেছে তার কোনোটাই এককভাবে সয়াবিন বা পাম তেলের নির্ধারিত মাত্রায় পাওয়া যায়নি। বরং কোনো কোনো তেলের মধ্যে পাওয়া গেছে কটন সিড ওয়েলের বৈশিষ্ট্য।

আরও পড়ুনঃ  এখনো কমেনি সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম

রাজধানীর একটি হোটেলে বিএফএসএ আয়োজিত এক সেমিনারে গত মঙ্গলবার এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এটি উপস্থাপন করেন বিএফএসএয়ের সদস্য (খাদ্য শিল্প ও উৎপাদন) অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, বোতলজাত সয়াবিন তেলের অবস্থা ভালো হলেও খোলা সয়াবিন ও পাম ওয়েলের কোনোটাই খাঁটি নয়। নমুনা সংগ্রহের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাজারে পাম তেল পাওয়া যায়নি। সবই ব্যবসায়ীরা সয়াবিন নামেই বিক্রি করছে।

তেলের পাশাপাশি তেলের ড্রাম পরীক্ষায় বিএফএসএ দেখতে পেয়েছে। এই ড্রামগুলো কোনটাই ফুড গ্রেডের নয়। এগুলোতে নানা ধরনের ময়লা যুক্ত থাকে। যে কারণে এখান থেকে কটূ গন্ধ তৈরির একটি আশঙ্কা থাকে। যদিও তেল পরিবহনে ফুড গ্রেডের ড্রাম ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বর্তমানে দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন তেল উৎপাদন হচ্ছে। যার মধ্যে ২২ লাখ টন ভোজ্য তেল হিসেবে এবং বাকিটা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার হচ্ছে। এই তেলের ৯৫ শতাংশই আমদানিনির্ভর। অপরিশোধিত তেল এবং ওয়েল সিড আমদানি হয় মূলত আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে।

ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ফর্টিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো তা পুরোপুরি মানছে না। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) তথ্য তুলে ধরে বিএফএসএ বলছে, পিইটি বোতলের ৮৭ শতাংশ নমুনায় ভিটামিন এ ফর্টিফিকেশন এর প্রমাণ মিলেছে। অন্যদিকে খোলা তেলের ৪৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ নমুনাতেই ভিটামিন এ যথাযথ মাত্রায় নেই।

খোলা তেলে ভেজাল বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইআইটি অণুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলছেন, সয়াবিনের দাম বেশি হওয়ায় পামকে সয়াবিন হিসেবে বিক্রির চেষ্টা হচ্ছে। এই অবস্থা দূর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বলছেন, ২০২২ সালের ১৬ মার্চের পর থেকে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবাইকেই বাধ্যতামূলক প্যাকেজিং এ যেতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মানুষ দাম দেয়ার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু তার জন্য তো আস্থা অর্জন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  অস্ট্রেলীয় যবের চালান স্থগিত করেছে বেইজিং

এদিকে, সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই খোলা ভোজ্য তেল বাজারজাত বন্ধ করতে চায়। এ জন্য কঠোর অবস্থানে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি হিসেবে সয়াবিন ও পাম তেলের মিশ্রণ, সরবরাহ ড্রামের অপরিচ্ছন্নতা, খোলা তেলে ভিটামিন ‘এ’র অভাব, দামের অস্থিরতাসহ বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন