- মাদকের টাকা সংগ্রহে বেড়েছে অপরাধ
- বাধা দিলেই ছুরিকাঘাত
- তৎপরতা নেই প্রশাসনের
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) সংলগ্ন এলাকায় দিন দিন বেড়ে চলেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। যা এখন নিত্যদিনের ঘটনাই বলা যায়। ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন বেরোবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করা হচ্ছে সর্বস্ব। কেউ বাধা দিলেই করা হচ্ছে ছুরিকাঘাত। তবে এতকিছুর পরও ছিনতাই রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, কখনো ভোরে বা সন্ধ্যার পর হাঁটতে বের হলে, কখনোবা নিজ মেসেই জিম্মি করে, আবার টিউশনি থেকে ফেরার পথে কাউকে একা পেলেই পথরোধ করছে ছিনতাইকারীরা। ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা। প্রথম চাওয়াতে দিতে অস্বীকার করলে ছুরিকাঘাত করে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে সর্বস্ব। ছিনতাইয়ের হটস্পট হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক গেটের (১নং গেট) সামনের অংশ, মডার্ন থেকে পার্ক মোড় সড়ক, লালবাগ থেকে পার্ক মোড়সংলগ্ন রাস্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন অলিগলি।
গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মেসে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক গেটের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহরুফা আফরোজ মিরা। অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক তার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে ব্যাগ ছিঁড়ে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে মাহরুফা আফরোজ মিরা বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে মেসে যাওয়ার পথে অ্যাকাডেমিক গেটের সামনে একা পেয়ে আমার ব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেয় অপরিচিত এক যুবক। আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম। পরে পুলিশ ও প্রক্টর স্যারকে বিষয়টি জানাই।’
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পরাগ মাহমুদকে রাত আড়াইটায় অ্যাকাডেমিক গেটের সামনে এবং ইতিহাস ও প্রতœতত্ত¡ বিভাগের শিক্ষক মনিরুজ্জামানকে পার্ক মোড়-লালবাগ রাস্তায় সকাল ৬টায় জগিংরত অবস্থায় ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। শিক্ষক মনিরুজ্জামানকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এবং শিক্ষার্থী পরাগ মাহমুদকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।
এর আগে গত ২০ আগস্ট ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ‘শামস ভিলা’ ছাত্রাবাসের তালা ভেঙে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানার রুমে ঢুকে তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজকর্মী উমর ফারুক বলেন, ‘সা¤প্রতিক সময়ে আমাদের এ অঞ্চলে নেশা ও জুয়া দুটোই বেড়েছে। নেশা করার টাকার প্রয়োজনে যুবকরা ছিনতাইয়ের পথ বেছে নিচ্ছে।’
প্রায় একই ধরনের তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা পুলিশের এসআই ইজার আলী। তিনি বলেন, ‘সা¤প্রতিক সময়ে ছিনতাইয়ের অন্যতম কারণ মাদকসেবনের অর্থ সংগ্রহ। মাদকের অর্থ সংকট হলেই ছিনতাই করছে যুবকরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ইলিয়াস ছাব্বির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার নানাবিধ কারণ রয়েছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।’
ছিনতাই রোধে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে সার্চলাইট বসানো হয়েছে। পুলিশকে টহল জোরদার করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় সীমানা প্রাচীর থেকে বাইরের দিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য ডিআইজির সঙ্গে কথা বলেছি।’
আনন্দবাজার/এম.আর