ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রফতানি সম্ভাবনা ২৫ হাজার কোটি টাকার

সরকার পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য গেল ২০১৯ সালে সুশীলন ও এমইউসি ফুডস নামের দু’টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে। যারা খুলনার পাইকগাছায় উৎপাদন করেছে। উভয় ক্ষেত্রেই হেক্টরে প্রায় ৮ টন করে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে।

তবে চাষীরা বলছেন, পরীক্ষামূলক চাষে সরকার কোনো ব্যয় বহন করবে না, পুরোটাই বহন করতে হবে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনকে (বিএফএফএ)। তারা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে প্রতি হেক্টরে ১০ হাজার কেজি করে চিংড়ি পেয়েছেন। অথচ আগে একই পরিমাণ জমিতে বাগদা-গলদা চাষ করে পাওয়া যেত মাত্র ৩০০ কেজি করে।

সুশীলনের প্রকল্প পরামর্শক প্রফুল্ল কুমার সরকার বলেন, পাইলট প্রকল্পে অপরিকল্পিত পুকুরে চাষ করে হেক্টর প্রতি প্রায় ১০ টন করে ভেনামি চাষ সম্ভব হয়েছে। তবে পুরো পদ্ধতি মেনে চাষ করলে হেক্টর প্রতি প্রায় ২০ থেকে ২২ টন ভেনামি চাষও সম্ভব। তিনি আরো বলেন, এদেশের মৎস্য পরিবেশ ভেনামির জন্য সহায়ক। তবে চাষকৃত পুকুরের গভীরতা লাগে ৬ থেকে ৭ ফিট। এটি উচ্চ ফলনশীল ও সহনশীল চিংড়ি হওয়ায় রোগবালাই কম। আবার এদের খাবারও কম দামে পাওয়া যায়।

বিএফএফএ নেতারা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি সভা হয়েছে। খুব শিগগিরই আরেকটি অন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হওয়ার কথা রয়েছে। গেল ২৮ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যমান চিংড়ি চাষের জমির মাত্র ১৬ ভাগ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষ করলে ১০৫টি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প পুরোদমে চালু করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫০টি কারখানায় চিংড়ির যোগান দেওয়া সম্ভব।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৫৫৩ একর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ১৬ ভাগ বা ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে ভেনামি চিংড়ি চাষ করে তিন লাখ টন অতিরিক্ত চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে চালু ৪৮টি কারখানার সঙ্গে নিষ্ক্রিয় ৫৭টি কারখানায় পূর্ণোদ্যমে রফতানি পরিচালনা করলেও উৎপাদিত চিংড়ি রপ্তানির জন্য আরও প্রায় ৫০টি কারখানা নতুনভাবে স্থাপন করতে হবে। এতে বছরে ২.৫০ বিলিয়ন ডলার (২১ হাজার কোটি টাকা) থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের (২৫ হাজার কোটি টাকা) অধিক রফতানি আয় করা সম্ভব হবে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে ভেনামি চিংড়ি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক রফতানি বাজারের ৭৭ ভাগ দখল করে নিয়েছে। এতে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি আয় ও প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো চালু রাখার স্বার্থে বাগদা ও গলদা চাষ পদ্ধতি আধুনিকায়নের পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ির হ্যাচারিসহ বাণিজ্যিক চাষ অবিলম্বে উন্মুক্ত করার অনুমতি প্রয়োজন। একই সঙ্গে আংশিক চালু বা পুরোপুরি বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর ব্যাংকের দায়-দেনা পরিশোধ করে পুনর্বাসন হওয়ার সুযোগ দিতে সরকারের সহানুভূতি প্রয়োজন।

চিংড়ি উৎপাদন বাড়াতে চাষ পদ্ধতি আধুনিকায়ন করতে চাষিকে অর্থের যোগান দেওয়ার সুপারিশ করে কাউন্সিল বলেছে, অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায় চিংড়ি চাষীদেরও ব্যাংকঋণ ও বীমা সুবিধা দিতে হবে। কৃষিখাত হিসেবে চিংড়ি চাষে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম নির্ধারণ করতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের কো-অর্ডিনেটর মো. আব্দুর রহিম খান এ ব্যাপারে বলেন, বিশ্বজুড়ে ভেনামি চিংড়ি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারের ৭৭ ভাগ দখল করে নিয়েছে। হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি আয় ও প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো চালু রাখার স্বার্থে বাগদা ও গলদা চাষ পদ্ধতি আধুনিকায়নের পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ির হ্যাচারিসহ বাণিজ্যিক চাষ অবিলম্বে উন্মুক্ত করার অনুমতি প্রয়োজন।

তবে একই সঙ্গে আংশিক চালু বা পুরোপুরি বন্ধ থাকা কারখানাগুলোর ব্যাংকের দায়-দেনা পরিশোধ করে পুনর্বাসন হওয়ার সুযোগ দিতে সরকারের সহানুভূতি প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, চিংড়ি উৎপাদন বাড়াতে চাষ পদ্ধতি আধুনিকায়ন করতে চাষিকে অর্থের যোগান দেওয়ার সুপারিশ করে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল থেকে বলা হচ্ছে, অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায় চিংড়ি চাষীদেরও ব্যাংকঋণ ও বীমা সুবিধা দিতে হবে। কৃষিখাত হিসেবে চিংড়ি চাষে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম নির্ধারণ করতে হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন