দেশে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একক কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নেই, যদিও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মূলত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপরেই বর্তায়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের কার্যক্রমের সমন্বয় প্রতিষ্ঠায় পৃথক কোনো বিভাগ নেই। তারই প্রেক্ষিতে আলাদা বিভাগ খোলার পরিকল্পনা করছে সরকার।
পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকারকে স্বাধীনতা-উত্তরকালীন বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণকারী বেসরকারি সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব)।
সম্প্রতি সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে চিঠি পাঠিয়েছেন।চিঠিতে তিনি কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স ও বিজনেস অ্যাফেয়ার্স নামে মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি ডিভিশন সৃষ্টি করার প্রস্তাব রেখেছেন। দাবি করেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি ডিভিশন সৃষ্টি করা হলেই কেবল মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এসব দায়িত্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হতে পারে।
প্রস্তাবের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রথাগতভাবে পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা ও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
গত কয়েক বছরে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯, প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে এসব আইন বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন বিভাগ, কমিশন ও কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু এসব উদ্যোগের পরও ভোক্তাদের অধিকার, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা রক্ষা হয়নি, ব্যবসায়িক প্রতারণা রোধ করা যায়নি। উল্টো নিয়ন্ত্রণ দিনদিন দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘স্বল্প আয় ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ভোক্তারা যাতে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য ১৫ থেকে ২০টি অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা সময়ের দাবি। মুক্তবাজার পরিবেশে ভোক্তাদের কল্যাণ ও জীবনমানের উন্নয়নের বিষয়টি বহুলাংশে পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা ও ব্যবসায়িক নৈতিকতার ওপর নির্ভরশীল। আবার মন্ত্রিপরিষদে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সাথেও অনেক ক্ষেত্রে ভোক্তা স্বার্থ জড়িত থাকে। নেপথ্যে থেকে এসব কাজ সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য পৃথক ডিভিশন না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন ও বিজনেস অ্যাফেয়ার্স নামে মন্ত্রণালয়ে পৃথক ডিভিশন সৃষ্টি করা হলে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা জনস্বার্থমূলক হবে।’
স্বাধীনতা-উত্তরকালেই দেশ পুনর্গঠনের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য মন্ত্রণালয়ে বিজনেস অ্যাফেয়ার্স এবং কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স নামে পৃথক দুটি ডিভিশন সৃষ্টি করেছিলেন। এমন পরিস্থতিতে দেশে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন খোলার প্রস্তাব করে ক্যাব।
এদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারতও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ সন্তোষজনক এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ‘কনজ্যুমার অ্যাফেয়ার্স, ফুড অ্যান্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন’ নামে পৃথক একটি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করেছে।
আনন্দবাজার/এম.আর