ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে প্লেনভাড়া বেশি

বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় আকাশপথে। তবে সবচেয়ে দ্রুততম পথ হওয়ায় প্লেনেই যায় বেশিরভাগ পচনশীল পণ্য। এছাড়া গার্মেন্টস পণ্যও যায়। তবে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশের প্লেনভাড়া তুলনামূলক কম। যার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের রফতানিকারকরা কম খরচে বিদেশে পণ্য পৌঁছাতে পারেন। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগীদের সাথে পেরে উঠছেন না বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। ফলে দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা হারাচ্ছেন তারা।

সবদিক থেকে হিসাব করে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা কম দামে পণ্য দিতে পারছেন না। ফলে ভারত-পাকিস্তানকে বেছে নিচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। যাত্রীবাহী প্লেনের চেয়েও তিনগুণ বেশি ভাড়া পণ্য পরিবহনের। ফলে এও ভাড়া দেশের রফতানিখাতের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা

সরকারের শাক-সবজি, ফলমূল ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ পণ্য রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রস্তুত রোডম্যাপেও বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের প্লেনভাড়ার চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, বর্তমানে প্লেনে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ পর্যন্ত পণ্য পাঠাতে খরচ হয় কেজিপ্রতি ৩ দশমিক ৩ থেকে ৩ দশমিক ৬ ডলার পর্যন্ত। তবে ভারতের কলকাতা থেকে একই গন্তব্যে সমপরিমাণ পণ্য পাঠাতে খরচ হয় ২ দশমিক ৮ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৩ ডলার। এবং পাকিস্তান থেকে রফতানিতে এ খরচ আরও কম, যা ২ দশমিক ৪ ডলার থেকে আড়াই ডলার পর্যন্ত।

বাংলাদেশের পণ্য রফতানিকারকদের আরেক বড় গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য। প্লেনভাড়ায় উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে সেখানেও। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত কেজিপ্রতি পণ্যের প্লেনভাড়া গড়ে দেড় ডলার। যা পাকিস্তান থেকে মাত্র দশমিক ৪০ ডলার। তবে একই গন্তব্যে ভারত থেকে কেজিপ্রতি পণ্যের প্লেনভাড়া ১ দশমিক ৮২ থেকে ১ দশমিক ৯১ ডলার পর্যন্ত।

পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে আগে থেকেই ছিল পণ্য পরিবহন ভাড়ার এমন অসামঞ্জস্যতা। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে প্লেনে পণ্য পরিবহন ভাড়ায় একটি বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।

কৃষিপণ্য রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে প্লেনে পণ্য পরিবহনে যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তা আগের চেয়ে অনেক বেশি।

সংগঠনটির তথ্যানুযায়ী, করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে (২০১৯ সাল) ইউরোপে কেজিপ্রতি ২ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৩ ডলারে পণ্য পরিবহন করা যেত, যা এখন ৩ দশমিক ৬ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যে প্রতি কেজি পণ্য ১ দশমিক ১৫ ডলারে পাঠানো যেতো, যা উঠেছে গড়ে দেড় ডলারে।

এ ব্যাপারে কৃষিপণ্য রফতানিকারকদের সংগঠন বিএফভিএপিইএর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর জানান, নানা কারণে আমাদের রফতানিখাত বারবার হোঁচট খাচ্ছে। আগে থেকে পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের পণ্য পরিবহন খরচ বেশি ছিল। এরপর আবার এখন করোনা-পরবর্তী সময়ে ভাড়া বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, সব কিছু হিসাব করে এ দেশের রফতানিকারকরা কম দামে পণ্য দিতে পারেন না। এ কারণে বিদেশি ক্রেতারা ভারত-পাকিস্তানকে বেছে নিচ্ছেন। পণ্য পরিবহন ভাড়া যাত্রীবাহী প্লেনের চেয়েও তিনগুণ বেশি। ভাড়া এ দেশের রপ্তানিখাতের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।

‘করোনা-পরবর্তী সময়ে অন্যান্য দেশেও বিমানভাড়া বেড়েছে। কিন্তু কার্গো পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে রয়েছে। ভারত বিকল্প নানা ব্যবস্থা করে কম খরচে পণ্য রফতানি করছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে সে রকম কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। ফলে আমরা ক্রেতা হারাচ্ছি।’-যোগ করেন তিনি।

আনন্দবাজার/ টি এস পি

সংবাদটি শেয়ার করুন