ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পোকার বর্জ্যে মাছের খাদ্য, কমবে খরচ

পোকার বর্জ্যে মাছের খাদ্য, কমবে খরচ

পোকা, বর্জ্য ও মাছ এ তিনটিকে সমন্বয় করে গবেষণায় সফল হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম। তিনি ‘কালো সৈনিক পোকা’ বা ‘ব্ল্যাক সোলজার্স ফ্লাই’ নামক একটি পোকার ওপর ১০ বছর গবেষণা করে এ সফলতা পেয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ময়লা-আবর্জনা, পচনশীল ফলমূল, শাক সবজি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা এবং গৃহপালিত প্রাণীর মল ভক্ষণ করে পোকাটির লার্ভা। সেই লার্ভা মাছের বিকল্প খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

গবেষকের দাবি, এ পোকা জৈব আবর্জনার ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত ভক্ষণ করে হজম করে থাকে। অবশিষ্ট অংশ বায়োডিজেল, প্রোটিন এবং কম্পোস্ট সারে রূপান্তরিত হয়।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, কালো সৈনিক পোকা পরিবেশবান্ধব এবং কৃষকের বন্ধু। শুষ্ক অবস্থায় এ পোকার লার্ভা থেকে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আমিষ, ৩০ থেকে ৩৬ শতাংশ স্নেহ এবং ২০ থেকে ২২ শতাংশ শর্করা পাওয়া গেছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম এ পোকার লার্ভাতে রয়েছে। গবেষণা চলাকালে আহরিত লার্ভা থেকে মাছের খাদ্য প্রস্তুত করে তেলাপিয়া মাছের ওপর গবেষণা করে বাজারে প্রাপ্ত বাণিজ্যিক খাদ্যের চেয়ে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।

ড. মো. আব্দুস সালাম আরও বলেন, আমাদের চাষিরা কালো সৈনিক পোকার চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে কম খরচে মাছ এবং হাঁস-মুরগির খাদ্যের অনেকটাই যোগান দিতে পারেন। আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাড়ির বর্জ্য পরিশোধন করে তারা গুণগত মানের সারও পেতে পারেন। তাছাড়া পোল্ট্রি বা ডেইরি ফার্মে কালো সৈনিক পোকার লার্ভা চাষ করে একদিকে প্রোটিন সমৃদ্ধ জীবন্ত খাদ্য পাওয়া যাবে, অপরদিকে ফার্মের বর্জ্য পরিশোধন করাও সম্ভব। চায়না, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার মত উন্নত দেশসমূহ ক্যাটফিস, তেলাপিয়া ও হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে কালো সৈনিক পোকার লার্ভা ব্যবহার করে আশানুরূপ ফল পেয়েছে। আমাদের দেশের জলবায়ু কালো সৈনিক পোকার জন্য উপযোগী হওয়ায় এর ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব। ফলে এর চাষের মাধ্যমে আমরাও কম খরচে মাছ এবং হাঁস-মুরগির ভেজালমুক্ত খাবার উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।

পোকাটির লার্ভা বাজারজাতকরণ সম্পর্কে গবেষক জানান, কালো সৈনিক পোকার লার্ভা মাছ চাষিদের মাঝে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পোকাটির লার্ভা কেজি প্রতি ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে এটি ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এখনও শুরু হয়নি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন