ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেলের পথে চিনিও, বিশ্বে কমে খাতুনগঞ্জে বাড়ে

তেলের পথে চিনিও বিশ্বে কমে খাতুনগঞ্জে বাড়ে

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশেও বেড়েছে দাম। তবে ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে চিনির মিষ্টতা। এ যেনো বিশ্ববাজারকে ছাড়িয়ে খাতুনগঞ্জকে দিচ্ছে প্রাধান্য।

কেননা বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমলেও মণপ্রতি ৯০০ হতে এক হাজার টাকা বেশি চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি বাজারটিতে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনি বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি (প্রায় ৪০ কেজি) ২ হাজার ৬৬০ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কিছুটা কমলেও দেশিয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে আগের বর্ধিত দামেই।

ইনভেস্টিং ডট কমের তথ্যমতে, গত চারদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন চিনির দাম কমেছে ১৩ ডলার বা ১ হাজার ১৭০ টাকা। ফলে ১২ নভেম্বর প্রতিটন চিনির দাম নেমে আসে ৫২৬ ডলারে। এর সঙ্গে ১০ হাজার টাকা খরচ যুক্ত করে প্রতিটন চিনির মূল্য দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৩৪০ টাকা এবং মণপ্রতি চিনি আমদানি করা হয় ১ হাজার ৮০৪ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে গত ১৬ নভেম্বর প্রতিটন চিনি বিক্রি হয়েছে ৫১৩ ডলারে। ১০ হাজার টাকা খরচসহ বাংলাদেশি টাকায় প্রতিটন চিনির ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ১৭০ টাকা এবং মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৬০ টাকায়।

এদিকে দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৬০ টাকায়। সে হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৯০০ হতে এক হাজার টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে দেশিয় বাজারে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা বলেন, দীর্ঘ ৭ থেকে ৮ মাস ধরে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনির দাম উর্ধ্বমুখী। এই সময়ে প্রতিমণ চিনির দাম ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে দফায় দফায় বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকায় পৌঁছাছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ১১ অক্টোবর থেকে চিনির নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে আসে, যা চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর থেকে প্রায় ২০০ টাকা কমে, ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৬৬০ টাকা দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে দেশিয় বাজারে।

এরমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দামে উত্থান-পতন থাকলেও দেশের বাজারে পণ্যটির দাম কমেনি বরং ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি করেছেন আমদানিকারকরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমদানিকৃত মূল্যের চেয়ে প্রতিমণ চিনিতে ২০০ টাকা মুনাফা করাই যথেষ্ট।

আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। ফলে দেশিয় বাজারে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী। ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকরা বলছেন, শুধু দেশীয় বাজার নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও চিনিসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী। দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী থাকায় দেশিয় বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে সরকার শুল্ক কমিয়ে আনায় চিনির দাম কিছুটা কমেছিল।

আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ কিছুটা দাম কমলেও দেশিয় বাজারে এর প্রভাব পড়তে বা দাম কমতে মাসখানেক সময় লাগবে। এদিকে খুচরা বাজারে দীর্ঘদিন ধরে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। এনবিআর-এর শুল্ক কমানোর পর পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমলেও তেমন প্রভাব নেই খুচরা বাজারে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববাজারে চিনির দাম আগের মাসের চেয়ে কমেছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। চিনি উৎপাদনে সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল, দ্বিতীয় ভারত। ২০২০-২১ মৌসুমে ব্রাজিলে চিনি উৎপাদন ৩২ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৩৯.৩৩ মিলিয়ন টন হওয়ার পূর্বাভাস করা হয়েছিল। দেশটিতে ইথানল উৎপাদন কমিয়ে বিপুল পরিমাণ আখ কারখানায় দেওয়ায় চিনি উৎপাদন বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন মানুষ যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করে সেখানে চিনি থাকতে হবে ১০% এর কম। স্বাস্থ্যগত বাড়তি উপকার পেতে তা ৫% এর কম রাখা প্রয়োজন। বছরে ১৪-১৫ লাখ টন চিনির চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদিত হয় ৬০ হাজার টনের মতো। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, আবদুল মোনেম লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে এবং পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ায় ৩ নভেম্বর দেশেও বাড়ানো হয় ১৫ টাকা লিটারপ্রতি। অপরদিকে বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমলেও সেদিকে নেই নজর।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন