আসন্ন (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। বাজেটের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাতের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ নেবে সরকার। এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া হবে। পরে ওই প্রস্তাবে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা মহামারির মধ্যে এবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
আসন্ন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা।
এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে। ছক অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, অংকে যা ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা রয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ উৎস অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতির বড় একটি অংশ পূরণ করতে চায় সরকার। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ করতে চাচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সংশোধন করে তা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু ব্যাংকের তুলনায় সুদহার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়েছে ব্যাপক হারে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। সেই হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
এদিকে অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সুদহার না কমিয়ে চলতি অর্থবছরে নানা শর্তজুড়ে দিয়েছিল সরকার। তবে ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সুদ পাওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে।
এবার বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি ছাড়াও অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার টাকা অর্থ সংগ্রহ করবে সরকার।
আনন্দবাজার/শহক