সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দেহের অংশ বিশেষ উদ্ধারের ৩৮ দিন পর হাত-পা, মাথাসহ মোট পাঁচ (৫) টুকরা উদ্ধার করে নিহতের পরিচয় শনাক্ত ও হত্যাকান্ডে জড়িত নিহতের স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরকিয়া প্রেম এবং স্ত্রীকে মারধরের কারণেই এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়।
এদিকে পরকীয়া প্রেমের বলি নিহত ওই ব্যক্তির নাম সুমন মোল্লা (২৭)। সে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানার গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে।
রবিবার (৩০ মে) দুপুরে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলণে উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও মিডিয়া) জাকির হাসান এসব তথ্য জানান।
পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত আরিফা বেগম (২৪) দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার নারায়নপুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর মেয়ে এবং নিহত সুমনের স্ত্রী। এদিকে নিহত সুমন-আরিফা দম্পতি গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানার সারদাগঞ্জ এলাকার মাওলানা শফিউল্লাহর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আর তনয় সরকার (৩১) ফরিদপুরের মধুখালী থানার নরকোনা এলাকার আদিত্য সরকারের ছেলে। সে সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট এলাকায় মতিউর রহমানের ভাড়া বাসায় থাকতো। নিহত সুমনের স্ত্রী আরিফা ও তনয় সরকার একই পোশাক কারখানায় চাকরি করতো।
জাকির হাসান আরো জানান, গত ২১ এপ্রিল (বুধবার) দুপুরে সারদাগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকার একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মাথা ও হাত-পা বিহীন অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে কাশিমপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে ক্লু’লেস এ মামলাটি নিবীড়ভাবে তদন্তে নামে পুলিশ। এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন হিসেবে শনিবার (২৯ মে) ভোরে তনয় এবং আরিফাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং নিহত ব্যক্তির নাম সুমন মোল্লা বলে প্রকাশ করে। পরে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে কাশিমপুরের সারদাগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকার ময়লার স্তুপ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত এবং চক্রবর্তীর তেতুইবাড়ি এলাকার ময়লার ভাগাড় থেকে নিহতের খন্ডিত হাত-পা, মাথাসহ ৫ (পাঁচ) টুকরা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তনয় সরকারের বাসা থেকে নিহতের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে- আরিফার সাথে তনয় সরকারের (৩১) পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। আরিফার স্বামী সুমন এ নিয়ে পরকীয়া প্রেমিক তনয় সরকারকে একাধিকবার মারধর করেন। এতে ক্ষোভে স্ত্রী আরিফা ও তনয় সরকার সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে দশটার দিকে আরিফা দুধের সাথে ১০ (দশ) টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে সুমনকে খাওয়ান। এক পর্যায়ে সুমন অচেতন হয়ে পড়লে আরিফা পরকীয়া প্রেমিক তনয়কে ফোন করে নিয়ে আসেন। সেই সাথে দু’জনে মিলে মুখে বালিশ চাঁপা দিয়ে সুমনকে হত্যা করে ঘরের মধ্যেই রেখে দেন। পরদিন মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সুমনের মরদেহটি করাত দিয়ে কেটে মাথা, দুই হাত, দুই পা আলাদা করে এবং চাপাতি দিয়ে পেট কেটে ফেলে। পরে আরিফার ব্যবহৃত কাঁথা দিয়ে বেঁধে দেহটি সেপটিক ট্যাঙ্কটিতে এবং দেহ থেকে আলাদা হাত, পা, মাথাসহ অন্য পাঁচটি (৫) অংশ পলিথিনে মোড়িয়ে তেতুইবাড়ি এলাকার ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেন।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলণের সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারী কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার, কাশিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবে খোদা।
আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ