- গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনের মধ্যেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে পশ্চিম তীর। গত সোমবার (১০ মে) থেকে গাজা উপত্যকায় লাগাতার বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি, স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপে এখন পর্যন্ত ১২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত অন্তত আহত হয়েছেন ৯ শতাধিক।
এরমধ্যেই হামাসের রকেট হামলার জবাবে গাজায় বিমান হামলা আরও জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। শুক্রবার (১৪ মে) দিনভর ওই অভিযানে অংশ নেয় দেড় শতাধিক জঙ্গি বিমান। এসময় গাজার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে দফায় দফায় বোমাবর্ষণ করা হয়। এতে অন্তত ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হন নারী ও শিশুসহ ৫০০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু ভবন ও স্থাপনা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় চারপাশ।
গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের এই ঘটনা এবার বিশ্লেষণ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। বিশ্লেষণ: নেতানিয়াহু ‘ভুল বাজি ধরেছেন’ শিরোনামে শুক্রবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ওই গণমাধ্যমটি।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ‘‘ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু নিজের ‘ভুল বাজিতে ফেঁসে গেছেন’। হামাসের প্রতিরোধে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এতটা বাইরে চলে যাবে এটা তিনি কল্পনা করেননি।’’
কারণ, ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরগুলো এখন হুমকির মুখে রয়েছে। ইসরায়েলের আয়রন ডোম হামাসের ছোঁড়া সব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও ধ্বংস হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার তেল আবিবে রকেট হামলা চালালে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করতে বাধ্য হয় ইসরায়েল। তেল আবিবের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে ইউরোপীয় এয়ারলাইনসগুলো। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ভার্জিন আটলান্টিক, জার্মানির লুফথানসা, স্পেনের আইবেরিয়া প্রভৃতি।
এদিকে, হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই শিশু, একজন ভারতীয়, একজন বয়স্ক নারী ও এক ইসরায়েলি সেনাসদস্য রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। যা ইসরায়েলের জন্য বিপদের কারণ।
এরইম্যধ্যে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। শুক্রবার (১৪ মে) তিনি বলেন, যদি গোটা বিশ্বও পাশ কাটিয়ে যায়, তবুও ইসরায়েলি নিপীড়ন মেনে নেবে না তুরস্ক।
ফিলিস্তিনের সমর্থনে লেবানন সীমান্ত থেকেও ইসরাইল অভিমুখে রকেট ছোঁড়া হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হামাসের পর হিজবুল্লাহ যোগ দিয়েছে বলে বলা হচ্ছে। একইসাথে সংঘাত বন্ধে বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি দেশ জোরদার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ইসরায়েলকে দেখানোর আরও বাকি আছে জানিয়ে হুমকি ছুঁড়ে দিয়েছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর উপ-প্রধান সালেহ আল আরোয়ি। তিনি বলেছেন, মূল ক্ষেপণাস্ত্র আমরা এখনো ব্যবহার করিনি। এখনও অনেক দেখার বাকি আছে। বাস্তবে প্রতিরোধ প্রতিদিনই আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে ইসরাইলি বর্বরতায় নেতানিয়াহুর এবারের পদক্ষেপ কিছুটা হলেও ভুল হয়েছে তার জন্য। এসব কারণে নেতানিয়াহু বর্তমানে সঙ্কটে রয়েছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষক বিশারা।
আনন্দবাজার/শহক