ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেসব কারণে রোজা ভাঙা যাবে

রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের একটি ফরজ ইবাদত। যা প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ও সবল প্রত্যেক মুমিনের জন্য পালন করা অত্যাবশ্যকীয়। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে রোজা ভঙ্গ করা বা ছেড়ে দেয়ার অবকাশ রয়েছে। তো চলুন জেনে নিই কোন কোন প্রেক্ষিতে রোজা ভঙ্গকারী গুনাহগার হবেন না :

অসুস্থ হলে

অসুস্থতা মানুষের শরীর ও মনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং কর্মক্ষমতা নষ্ট করে। অসুস্থ ব্যক্তির রোজা না রাখার অবকাশ আছে। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ওই সংখ্যক রোজা রাখতে হবে।

তবে শর্ত হচ্ছে, অসুস্থতা এমন পর্যায়ের হওয়া, যাতে ব্যক্তির বড় ধরনের ক্ষতি, কষ্টের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, সুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে পরে কাজা রোজা পালন করতে হবে।

বার্ধক্য

ইসলামি শরিয়ত অতিশয় বৃদ্ধ নারী ও পুরুষের যদি রোজা রাখার শারীরিক সামর্থ্য না থাকে তবে তাদের না রাখার অবকাশ দিয়েছে। যদি এমন হয় যে, বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ বছরের কোনও সময় (দিন ছোট বা বড় হোক, শীত বা গ্রীষ্ম হোক) রোজা কাজা করতে পারবে না, তবে তারা কাফফারা আদায় করবে। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, রোজার কারণে যাদের খুব বেশি কষ্ট হয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদিয়াস্বরূপ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আয়াতটি এখনও রহিত হয়নি। এমন বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী যাদের রোজা রাখার সামর্থ্য নেই, তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন অভাবগ্রস্তকে খাবার খাওয়াবে।

গর্ভধারণ

অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারী যদি নিজের ও সন্তানের ব্যাপারে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা করেন তবে তার জন্য রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুসাফিরের জন্য রোজা ও অর্ধেক নামাজ ছাড় দিয়েছেন এবং অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীর জন্য রোজার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন।

তবে পরবর্তী সময়ে তাকে রোজা কাজা করতে হবে। এবং ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে তার জন্য রোজা ছেড়ে দেওয়া জায়েজ হবে না।

সফর

সফররত ব্যক্তির জন্য রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় ১৮৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ওই সংখ্যক রোজা রাখতে হবে।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রমজানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে রমজানে সফর করেছি। তখন রোজাদার ব্যক্তি রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিকে এবং রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তি রোজাদার ব্যক্তিকে দোষারোপ করেনি।

তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, যতটুকু পরিমাণ সফর করলে নামাজ কসর করা বৈধ, ততটুকু সফর করা। তবে নামাজ কসর করার মতো রোজা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং ব্যক্তি চাইলে রোজা রাখতে পারবে আবার তা ভাঙতেও পারবে। তবে রোজা ভাঙলে পরবর্তী সময়ে তা কাজা করে নিতে হবে।

অনিবার্য কারণে

বিশেষ প্রয়োজন পূরণ এবং আপাতত বিপদের হাত থেকে বাঁচতে কখনো কখনো রোজা না রাখার অবকাশ আছে। যেমন, ডুবে যাওয়া বা আগুনে পোড়া ব্যক্তির চিকিৎসা রোজা ভঙ্গ না করলে করা সম্ভব হয় না। কিন্তু রবর্তী সময়ে রোজা কাজা করতে হবে।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে রোজা রেখে মক্কার উদ্দেশে সফর করেছিলাম। আমরা একজন এক জায়গায় যাত্রাবিরতি দিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা তোমাদের শত্রুর নিকটবর্তী হয়েছ। রোজা ভঙ্গ করাই তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে।

 

আনন্দবাজার/টি এস পি

 

সংবাদটি শেয়ার করুন