শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইসিইউতে একটি বেডের অপেক্ষায় ২০ থেকে ৩০ মুমূর্ষু রোগী

করোনা সংক্রমণ বাড়ায় মুমূর্ষু কোভিড রোগীদের জন্য আইসিইউ বেডের চাহিদা বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে একটি আইসিইউ বেডের জন্য অপেক্ষায় থাকছে ২০ থেকে ৩০ জন। কেউ সুস্থ হলে বা মারা গেলে একটি বেড খালি হচ্ছে, মুহূর্তের মধ্যে সেটিতে রোগী ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। তাই বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে আইসিইউ না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে দেয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে আইসিইউতে রোগী ভর্তি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারি হাসপাতালে সিট না পেয়ে অনেক চেষ্টা করে কেউ কেউ বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী ভর্তি করতে পারছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে খরচ অনেক বেশি। সেই খরচ মেটাতে মানসিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছে রোগীর স্বজনেরা।

সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে বেড ভাড়া, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন ওষুধ ফ্রিতে দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় কোন ওষুধের সাপ্লাই না থাকলে সেটি কিনতে হয়। বিপরীতে হাসপাতালভেদে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর একদিনের আইসিইউ ব্যায় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। এর বাইরে ওষুধ বা ইনজেকশন কিনতে আলাদা অর্থ ব্যয় করতে হয়।

ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউয়ের অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট ডা. অনিরুদ্ধ  বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে একজন রোগী অক্সিজেন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ওষুধ ফ্রি পায়। রেমডিসিভির বা অন্য জরুরি কোন ওষুধের সাপ্লাই না থাকলে তা কিনতে হয়। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে তুলনামূলক অনেক কম খরচে চিকিৎসা নিতে পারেন রোগীরা। এখানে যদি দিনে ১০ হাজার টাকা খরচ হয় বেসরকারি হাসপাতালে সেটি দিনে ৫০ হাজারের বেশি। বেসরকারি হাসপাতালে বেড ভাড়া, অক্সিজেন, ডাক্তারের রাউন্ড, ওষুধ সব আলাদা আলাদা করে বিল করা হয়’।

আরও পড়ুনঃ  ভোগান্তিতে চালক-যাত্রীরা

ডা. অনিরুদ্ধ বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের আইসিইউতে এখন একটি বেডও খালি নেই। আইসিইউতে এখন একটি বেডের বিপরীতে ২০-৩০ জন রোগী অপেক্ষায় থাকেন। এর আগের ওয়েভে পরিস্থিতি এতোটা ভয়াবহ ছিল না। আইসিইউ বেডের অভাবে রোগীরা ওয়ার্ডে মারা যাচ্ছে, আমাদের কিছুই করার থাকছে না’।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুধবারের তথ্য অনুসারে, সারাদেশে ৬০২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে খালি আছে ১৬৯টি বেড। আর ঢাকার কোভিড ডেডিকেটেড সরকারি-বেসরকারি ১৯টি হাসপাতালের ২৮৫টি আইসিইউ এর মধ্যে বেড খালি আছে মাত্র ২০টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি আছে মাত্র ১১টিতে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড খালির তথ্য দিচ্ছে, সেগুলোতেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আসলে কোন বেড খালি নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে চারটি বেড খালি আছে ।

কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. শাগুফা আনোয়ার টিবিএসকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আইসিইউতে কোন বেড খালি নেই। প্রতিনিয়ত জেনারেল বেড ও আইসিইউ বেডের জন্য ভিআইপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সোসাইটি, এমব্যাসির অনুরোধ পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকছে না। সবাইকে আমাদের অপেক্ষায় রাখতে হচ্ছে’।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, ‘এ বছরের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে আরও ১০০টি আইসিইউ বেড সংযুক্ত করেছি। এর মধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি করে আইসিইউ বেড বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেট হাসপাতালে ২০০টি আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজ চলছে’।

আরও পড়ুনঃ  পুঁজিবাজারে মন্দার হাওয়া, মুখ ফেরাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

বুধবার স্বাস্থ্য দিবসের এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে সেবা পাচ্ছেন না। হাসপাতালগুলোতে সাধারণ ও আইসিইউ অনেক বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমরা কোভিড নিয়ন্ত্রণ করতে পাচ্ছিনা। এ দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে সরকারের ১৮ নির্দেশনা ও লকডাউন মানতে হবে। তা হলে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো। কিন্তু আমরা যদি বেপরোয়া হয়ে যাই, আজ যা করবো কাল তার ফল পাবো’।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন