ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিল্পখাতে ঋণ বিতরণ কমেছে

করোনার প্রভাবে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন কিংবা বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণ করতে চাইছেন না উদ্যোক্তারা। এর প্রভাবে এ খাতে ঋণ চাহিদা হ্রাস হওয়ায় কমেছে ঋণ বিতরণ। ২০১৯ সালের তুলনায় গেল বছর শিল্পখাতে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। ২০২০ সালে বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা ২০১৯ সাল শেষে ছিল ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত শিল্পখাতে ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

শিল্পখাতে মেয়াদি ও চলতি মূলধন হিসেবে দুই ধরনের ঋণ বিতরণ হয়ে থাকে। পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও যাবতীয় ব্যয় মেটাতে স্বল্প মেয়াদের (এক বছর বা দুই বছর) জন্য নেয়া হয়ে থাকে চলতি মূলধন ঋণ। শিল্পখাতে বিতরণ করা এই ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় ৮০ ভাগ।

গেল বছর করোনার প্রভাবে বছরের অর্ধেক সময় জুড়ে বহু কারখানা উৎপাদনে যেতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে কিছু কারখানা উৎপাদনে গিয়েছিল।

যার প্রভাবে ২০২০ সাল শেষে চলতি মূলধন ঋণ বিতরণ হ্রাস পাওয়ার হার, মেয়াদি ঋণ বিতরণের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। গেল বছর ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি মূলধন ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। অন্যদিকে মেয়াদি ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৩২ শতাংশ।

২০২০ সালে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা মেয়াদি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। নতুন কলকারখানা স্থাপন ও বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি এই ঋণ নেয়া হয়ে থাকে। তাই এই ঋণ নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। তবে গেল বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ঋণ বিতরণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

ডিসেম্বর শেষে শিল্পখাতে সেপ্টেম্বরের তুলনায় ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে চলতি মূলধন ঋণ বেড়েছ ৫.৮৫ শতাংশ। আর মেয়াদি শিল্প ঋণ বেড়েছে ৬.৭৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ না হওয়া এবং উৎপাদন কমে যাওয়ায় শিল্পখাতে ঋণের চাহিদা কম। কোভিড এর জন্য অনিশ্চিত পরিবেশে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ঋণ বিতরণ কিছুটা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বছরের শেষ দিকে এসে কিছু কারখানা উৎপাদনে যাওয়া এবং প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। তবে আগের পর্যায়ে যেতে অনেক সময় লাগবে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান তৈরিতে মূল ভূমিকা রাখে শিল্পখাতের মেয়াদি ঋণ। এই ঋণ কমে যাওয়া মানেই হচ্ছে নতুন শিল্প হচ্ছে না, কর্মসংস্থানও বাড়ছে না।

অন্যদিকে কাজের খোঁজে বিদেশেও যেতে পারছে না তরুণরা। আবার শিল্পখাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হতে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কর্মসংস্থান প্রত্যাশীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিড শেষে হয়তো এ থেকে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।

যেহেতু গেল বছর জুড়েই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা ছিল সেক্ষেত্রে কিস্তি পরিশোধে চাপে ছিলেন না ব্যবসায়ীরা। তবে যারা পরিশোধ করেছিলেন তাদের ঋণ সমন্বয় করা হয়েছে। করোনার মাঝেও শিল্পখাতের ব্যবসায়ীরা গেল বছরের ডিসেম্বর শেষে ৯২,৭১৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩.৬৮ শতাংশ বেশি।

ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় ঋণ শ্রেণিকরণ বন্ধ থাকলেও গেল বছর খেলাপি হওয়ার পরিমাণ ছিল সামান্য। ২০২০ সালে শিল্পখাতে ২৮৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে। এর মধ্যে ২৫২ কোটি টাকা মেয়াদি শিল্প ঋণ, বাকিটা অন্যান্য ঋণ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন