নদীমাতৃক সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামল ভরা আমাদের এ বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষের এক সময় জীবনও ছিলো নদীকেন্দ্রিক। নওগাঁর আত্রাইয়ে এক সময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদী এখন সবুজে ঘেরা ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। চৈত্রের তাপদাহে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় আত্রাই নদী শুকিয়ে কোথাও ফসলের মাঠ, আবার কোথাও খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, আত্রাই নদী বাংলাদেশের উত্তর প্রান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে শুরু করে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ , খানসামা ,চিরিরবন্দও হয়ে নদীটি আবারো ভারতের মধ্যে প্রবেশ করে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই নদী নওগাঁর মহাদেবপুর, পত্নীতলা, মান্দা, আত্রাই, নাটোরের সিংড়া, গুড়দাসপুর ও পাবনার ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর বেড়া হয়ে নদীটি যমুনা নদীর সাথে একীভূত হয়েছে।
ঐতিহাসিক দিক থেকে এই নদীর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এক সময় এই নদী ছিল খরস্রোতা নদী। সবসময় এ নদীতে থাকত পানির উত্তাল তরঙ্গমালা। কি চৈত্র কি আষাঢ় বর্ষা ও শুষ্ক উভয়ই মৌসুমে ছিল না পানির অভাব। সে সময় এ নদী দিয়ে বয়ে যেত লঞ্চ, স্টিমার ও বড় বড় পালতোলা নৌকাসহ বিভন্ন প্রকার জলযান দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মালামাল পরিবহনের একমাত্র রুট হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই নদী। তাই প্রতিনিয়ত দেখা যেত নদী দিয়ে বয়ে চলেছে বিশাল আকৃতির সব পাল তোলা নৌকার বহর।
এছাড়াও এলাকার হাজার হাজার কৃষক কৃষি পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করত নদীর পানি।নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে একদিকে সাশ্রয় অপরদিকে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই খরস্রোতা নদী এখন শুকিয়ে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। ফলে আর দেখা মেলে না পালতোলা নৌকার বহর, লঞ্ছ, স্টিমার সহ কোন জলযানের। এখন চৈত্র মাস না আসতেই শুকিয়ে যায় নদীর পানি। এই জন্য এখন কোথাও ফসলের মাঠ, কোথাও খেলার মাঠ, কোথাও বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে ঐতিহাসিক আত্রাই নদী। এদিকে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় যেমন মেলে না জলযানের দেখা তেমনি সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে নদী পথে ব্যবসায়ীরা। ভূগভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় যেমন নদীর পানি শুকিয়ে গেছে।
উপজেলা মধুগুড়নই গ্রামের মো:নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, আমরা যুগ যুগ থেকে নদী পথে নৌকা নিয়ে মাটির তৈরী মালামালের ব্যবসা করে থাকি। মাটির তৈরী ডাবর, টালি, পাতিল, কলসসহ বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী নৌকা যোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। বর্তমানে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়েছে। এজন্য আমরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। এছাড়াও নদী পানি শূন্য হয়ে যাওয়ায় বোরো সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার কৃষক।
বিপ্রবোয়ালিয়া গ্রামের আব্দুর রউফ বলেন, নদীর পানি সেচে বোরো চাষ করলে আমাদের খরচ হয় বিঘা প্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। অথচ নদী পানি শূন্য হওয়ায় মাঠে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে অনেক গুণ বেশি। এতে আমাদের সেচ খরচ ও অনেক বেড়ে যাচ্ছে আর জমির উর্বরতা ও কমে যাচ্ছে।
আনন্দবাজার/শাহী/নাহিদ