বিশ্ব অর্থনীতি ও সমৃদ্ধিতে যে গুরুত্বপূর্ণ ধাতুটির অন্যতম অবস্থান রয়েছে তা হলো তামা। দৈনন্দিন প্রয়োজনে উল্লেখযোগ্য বেশকিছু খাতে তামার ব্যবহার বিশ্বসভ্যতাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। তামা উন্নয়ন সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে উৎপাদিত মোট তামার প্রায় ৬৫ শতাংশ বৈদ্যুতিক খাতে, ২৫ শতাংশ শিল্প খাতে এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ পরিবহন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদায় বিশ্বে বর্তমানে উৎপাদিত তামার পরিমাণ যথেষ্ট নয়। এ অবস্থার উত্তরণ না ঘটলে তামার বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়তে পারে বিশ্ব। এমনকি এক দশকের মধ্যেই মূল্যবান ধাতুটির অপ্রতুলতা বিশ্ববাণিজ্য ও উন্নয়ন খাতকে মারাত্মক সংকটে ফেলবে বলেও মনে করছেন তারা। খবর ব্লুমবার্গ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজনেস ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি সিআরইউ গ্রুপের এক পূর্বাভাসে বলা হয়, বছরে তামার বৈশ্বিক ঘাটতি প্রায় ৪৭ লাখ টন। ২০৩০ সালের মধ্যে এ ঘাটতি পোষাতে হলে এ খাতের আরো ১০ হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে বিশ্বকে। বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতের উন্নয়ন ঘটাতে হলে তামা শিল্পের সমৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
পণ্য বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট ট্রাফিগুরা গ্রুপের মতে, যদি নতুন করে তামার কোনো খনি আবিষ্কার না হয় তবে বিশ্ববাজারে ধাতুটির সম্ভাব্য ঘাটতি দাঁড়াবে এক কোটি টনে। অন্যদিকে সংকট সমাধানে ১০ বছরের মধ্যে খনির সংখ্যা বাড়াতে হবে বলে মনে করছে খনিসংশ্লিষ্ট বিএইচপি সংস্থা। তাদের মতে, এ ব্যবধান কমাতে হলে চিলিতে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ এসকন্ডিডার মতো অন্তত আরো আটটি খনি থেকে তামা উৎপাদন করার সক্ষমতা থাকতে হবে বিশ্বের।
ওয়্যারিং ও পাইপ থেকে শুরু করে ব্যাটারি ও মোটর পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই তামার ব্যবহার লক্ষণীয়। অর্থনীতির পথপ্রদর্শক কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের অগ্রগতির মূল উপাদান হিসেবে তামার ভূমিকা অপরিসীম। উৎপাদক দেশগুলো যদি এর ঘাটতি পূরণে সক্ষম না হয়, তাহলে ক্রমাগত এর দাম বাড়তে থাকবে। এছাড়া আমেরিকা, চীনের মতো বড় বড় অর্থনীতির দেশ তথা বিশ্বে এক বড় ধরেনর সংকট তৈরি করবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবেলায় জ্বালানি ব্যবহারে পরিবর্তনের বৈশ্বিক উদ্যোগকে ব্যাহত করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামার দামের উচ্চমূল্য অ্যালুমিনিয়ামের মতো অন্য কোনো সস্তা বিকল্প উপকরণের দিকে ঠেলে দেবে। এ বিকল্প উপকরণের ব্যবহার সাময়িকভাবে তামার সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে বলেও মনে করছেন তারা।
আনন্দবাজার/শহক