জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অর্থায়নে ‘মুজিববর্ষ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট- ২০২১’ আয়োজনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শাখা ছাত্রলীগকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে এ টুর্নামেন্ট আয়োজন হলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বাহিরে কোন সাধারণ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির দাবি এটি তাদের দলীয় টুর্নামেন্ট সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহযোগীতা করেছে।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এ টুর্নামেন্টে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও জার্সিতে আয়োজক হিসেবে রয়েছে ছাত্রলীগের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক তিনটি ছাত্র হল থেকে সর্বমোট আটটি দল খেলায় অংশগ্রহণ করে। সাত বীরশ্রেষ্ঠ ও ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে নামকরণ করা এসব দলে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি কোন সাধারণ শিক্ষার্থী । সবদলেই শুধু শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই সুযোগ পেয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়দেরও এ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের সাধারণ শির্ক্ষাথীদের খেলতে না দিয়ে প্রশাসন বৈষম্য তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গতবছর আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্টের ১৯ টি দলের বেশ কয়েকজন অধিনায়কের সাথে কথা হলে তারা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দলের অধিনায়ক বলেন, ‘প্রশাসনের অর্থায়নে আয়োজিত এ টুর্নামেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন টপ পারফর্মার নেই। শুধুমাত্র ছাত্রলীগ না করায় বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য হারাবে।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধুমাত্র ছাত্রলীগের জন্য ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও ছাত্রলীগের বাহিরে কেউ খেলার সুযোগ পাচ্ছেনা। প্রশাসনের এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।’
এদিকে এ টুর্নামেন্টের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা জানেন না খোদ অর্থ দপ্তরের পরিচালক। বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসেব দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কামাল উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানিনা। আপনারা ছাত্রলীগকে জিজ্ঞেস করেন কতটাকা বাজেট দেওয়া হয়েছে।’ তবে দপ্তরের পরিচালক হিসেবে তাঁর এ তথ্য জানার কথা কিনা এমন প্রশ্নে তিনি কোন তথ্য দিতে পারবেন না বলে জানান। তবে গোপনসূত্রে জানা যায়, এক শিক্ষকের নামে একটি চেক অনুমোদন দেওয়া হয়। মূলত সেই চেকের টাকা থেকেই এ টুর্নামেন্টের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ক্রীড়া পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ড. মো: শামিমুল ইসলাম বলেন, ‘এ টুর্নামেন্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নামে একটি আবেদনপত্র এসেছিল। সেই হিসেবেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা খেলতে না পারলে বিষয়টা খুবই দুঃখজনক।’
এদিকে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ এ টুর্নামেন্টকে নিজেদের দলীয় টুর্নামেন্ট দাবি করে বলেন, ‘এ টুর্নামেন্টের বাজেটের একটি অংশ ছাত্রলীগ ম্যানেজ করেছে। এটা ছাত্রলীগের দলীয় টুর্নামেন্ট। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতে সহযোগীতা করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি ।
আনন্দবাজার/শাহী/মোহাইমিন