ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলতি দায়িত্বের শেষ নেই গবি উপাচার্যের

উপাচার্যের বৈধতা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পতি না হলেও সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত ও চলতি উপাচার্য হিসেবে সম্পূর্ণ ৪ বছর মেয়াদী দায়িত্ব পালন করেছেন ডাঃ লায়লা পারভীন বানু। দায়িত্বের ৪ বছর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখনো নিজেকে ভিসি হিসেবে দাবী করেন সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া এ চলতি উপাচার্য। মেয়াদ শেষের বিষয়টি অজানা ট্রাস্টি বোর্ডের কাছেও।

২০১৬ সালের ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে, ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ ডা. লায়লাকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয় গবি ট্রাস্টি বোর্ড। একই বছরে ভারপ্রাপ্ত পদ থেকে চলতি দায়িত্ব পাওয়ার পর ৯ আগস্ট ইউজিসি এক চিঠিতে তাঁকে ওই পদে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। গণবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। রিটে ডা. লায়লার পক্ষে রায় দেওয়া হলে ইউজিসি পুনরায় আপিল করে এবং সে মামলা এখনো চলমান। এ কারণে ইউজিসির তালিকায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ লাল দাগে শূণ্য দেখা যায়।

এ সম্পর্কে ইউজিসির বেসরকারী শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুক বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত কিংবা চলতি উপাচার্য থাকার কোন নিয়ম আইনে নেই। এর বিপরীতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কতৃক নিয়োগ পাওয়া উপ উপাচার্য অথবা ট্রেজারার থাকতে পারে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়েরর উপাচার্য হিসেবে যিনি নিয়োগ প্রাপ্ত ছিলেন তাকে কখনো আমরা উপাচার্য হিসেবে স্বীকৃতি দিই না কেননা তিনি রাষ্ট্রপ্রতি কতৃক নিয়োগপ্রাপ্ত না। যেদিন থেকেই তিনি নিয়োগ রয়েছেন সেদিক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তার থাকাটা অবৈধ, মেয়াদ শেষ তো পরের ব্যাপার।

এদিকে, ইউজিসির তালিকায় গবি উপচার্য পদ শূণ্য থাকায় চার বছর ধরে সমাবর্তন না হওয়া, চাকরিতে প্রবেশে অসুবিধা, বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ তৈরী না হওয়া সহ নানা জটিলতায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে লাগাতার ৬৮ দিন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও মেয়াদকালের শেষ দিনেও আসেনি কোনো সমাধান। চার বছরে ইউজিসি স্বীকৃত কোন পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য পায়নি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

বৈধ উপাচার্যের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে উঠা সংগঠন গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি মোঃ রনি আহম্মেদ বলেন, ‘ম্যাম চলতি বা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বৈধতা না থাকায় শিক্ষার্থীরা মূল সনদ পায়নি, বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, সমাবর্তন পায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উনার বৈধতার জন্য যখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলো, তখন বৈধতা না নিয়ে তিনি ক্যাম্পাসে আসবেনা বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বৈধতা ছাড়াই আবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে চেয়ারে বসে আছেন। আমরা মনে করি, আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত এখন তার মেয়াদ শেষকালে অবসর নেওয়া উচিত। তিনি সহযোগিতা করে একজন নতুন বৈধ ভিসি এনে দিলে তার কাছে শিক্ষার্থীরা কৃতজ্ঞ থাকবে।’

উপাচার্য জটিলতা নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হোসাইনুল আরেফিন সেতু বলেন, একজন পূর্ণাঙ্গ উপাচার্যের মেয়াদ থাকে ৪ বছর, আর উনি ভারপ্রাপ্ত আর চলতি হিসেবেই চার বছর কাটিয়ে দিলেন। এখনো উনার বৈধতা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। আগামী ১০ বছরে যদি মামলা নিষ্পত্তি না হয় তাহলে কি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় চলবে! এইটা কখনো হয়! আমার মনে হয় বিবেকবান কেউই বিষয়টাকে সমর্থন করবে না।

আনন্দবাজার/শাহী/আশিকুর

সংবাদটি শেয়ার করুন