‘আমি খুব ছোটবেলা থেকেই এসব যন্ত্রের প্রতি আসক্ত ছিলাম। প্রথম তৈরি করি বিমান। এতে আমাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এই বিমান পরীক্ষামূলক চালাতে গিয়ে একজনের ক্ষেতে আঁচড়ে পড়লে সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তারপর থেকে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।’ কথাগুলো বলছিলেন রংপুর সদর উপজেলার কিশামত হরকলি গ্রামের হারুন আর রশিদ।
তিনি নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, বাড়ির আশেপাশের মানুষের অনেক কটু কথা হজম করে তৈরি করছেন মহাকাশ দেখার যন্ত্র টেলিস্কোপসহ চার চারটি ভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোস্কোপ ও একটি ফিল্ম প্রজেক্টর। ইতোমধ্যে তিনি একটি হেলিকপ্টার তৈরির কাজও শুরু করেছেন। পেশায় তিনি একজন স্কুল শিক্ষক। পাশাপাশি একজন উদ্ভাবক ও চিত্রশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই ক্লাসে মেধাবীদের একজন ছিলেন তিনি।
ছাত্রজীবনে বেশ কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিকে রাজশাহী বোর্ডে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষার মেধাবৃত্তি পেলেও আর্থিক সমস্যার কারণে যেতে পারেননি। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজে ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে পড়ালেখা শুরু করলেও সমাপ্ত করা হয়ে উঠেনি। ব্যক্তিজীবনে তিনটি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন আবিষ্কারের নেশায়।
হারুন আর রশিদ বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও জেলা প্রশাসকের কাছে সাহায্যের আবেদন করেও কাজ হয়নি। কোনো প্রকার সাহায্য না পেলেও থেমে থাকিনি। নিজের চাকরির অর্ধেক টাকা সংসার আর অর্ধেক টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি কিনি। এই মুহূর্তে সরকার যদি আমাকে সহযোগিতা করে, তাহলে আমি আমার চিন্তা-ভাবনা আরো ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবো। আমি যেই যন্ত্রপাতি তৈরি করছি, তা বাজারে অন্য যন্ত্রপাতি থেকে কম খরচে উৎপাদন করতে পারি।
হারুন আর রশিদকে যারা সামনে থেকে দেখেছেন, তার কাজ পর্যবেক্ষণ করেছেন, তারা মনে করছেন, এমন প্রতিভাবানকে সুযোগ দিলে দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। তারা চাইলে দেশের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাই তাদের কৌশল নির্ধারণ করা এবং তা বাস্তবায়ন করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘হারুন আর রশিদ যে যন্ত্রগুলো তৈরি করেছেন, তা আমাদের জন্য খুবই গর্বের বিষয়। আমি তার এই কাজের পেছনে যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন, করবো। আমাদের দেশের সুনাম তার মাধ্যমে বাড়বে, এই কামনাই করি।
আনন্দবাজার/শাহী/হিমেল