ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৈয়দপুরে ভবন নির্মাণে ওভারলোড ওয়েল্ডিং ব্যবহারে একাধিক কম্পিউটার নষ্ট

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধ বহুতল ভবন নির্মানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ওভারলোড ওয়েল্ডিং মেশিন চালানোতে আশেপাশের দোকানের একাধিক কম্পিউটারসহ বিভিন্ন দামি ডিভাইস নষ্ট হওয়ায় বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ীরা। ৪ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের শহীদ ডাঃ জিকরুল হক রোডস্থ সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সামনে বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ বিদ্যুৎ কর্মীদের অবরুদ্ধ করে তারা এর প্রতিকার চেয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় শহরের এ প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ওভারলোড ওয়েল্ডিংয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, প্রেসক্লাব সংলগ্ন রেলওয়ের লিজ নেয়া জায়গায় ইমতিয়াজ প্রবাল নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘ প্রায় ২ মাস যাবত বহুতল ভবন নির্মানের কাজ করছেন। রেলওয়ের জমিতে কোন প্রকার নির্মাণকাজ করা অবৈধ হলেও প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি এর কোন তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছেন তার কাজ। এমনকি সৈয়দপুর পৌরসভারও কোন অনুমোদন নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। এতে পৌর কর্তৃপক্ষ বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে গেলেও পরক্ষনই সে তার কাজ আবারও শুরু করেন।

এই কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে কয়েকবার দূর্ঘনটাও ঘটেছে। এতে পাশের দোকানদাররাসহ পথচারীরা এ পথে চলাচল করছেন আতঙ্কের মধ্যে। এমনি পরিস্থিতিতে সপ্তাহ খানেক আগে রাস্তার উপর প্রধান বৈদ্যুতিক ১১০০ ভোল্টেজের তারের উপর রড ফেলে দেয়ায় অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এতে তা নিয়ন্ত্রণ করে। এতেও ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বেঁচে যায় প্রতিবেশী দোকানদাররা।

এরই মধ্যে গতকাল থেকে তিনি তার দোকানে ব্যবহৃত ২২০ ভোল্টের লাইন দিয়েই ৪৪০ ভোল্টের ওয়েল্ডিং মেশিন চালানোয় আশেপাশের দোকানগুলোর সংযোগেও এর প্রভাব পড়ায় লো ভোল্টেজ ও ওভার ভোল্টেজের চাপে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়।

এতে পাশের পপুলার হোমিও ফার্মেসীর ৩ টি সিসি ক্যামেরা, ২টি এলইডি বাল্ব, মিলন কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, রাউটার, মিথিলা কম্পিউটারের প্রিন্টার, এলইডি টিউবলাইট, জনি বোরকা হাউসের ২ টি বাল্ব, সিসি ক্যামেরা, নওশাদ ফুল বিতানের কম্পিউটার, আলপনা টেলিকমের একটি মোবাইল সার্ভিসিং ডিভাইসসহ আশেপাশের দোকানের বিভিন্ন ইলেকট্রিক পন্য সামগ্রী নষ্ট হয়েছে। পাশের একতা প্রেসের রিপনের বাড়ির এলইডি বাল্ব ও একটি এলইডি টেলিভিশনও নষ্ট হয়েছে।

এ ব্যাপারে আলপনা টেলিকমের সোহাগ জানান, ইতোপূর্বে তিনি নির্মাণ কাজে গ্যাস ওয়েল্ডিং ব্যবহার করলেও গতকাল থেকে বিদ্যুতের খুটি থেকে অবৈধ সংযোগ নিয়ে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করায় এ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। যে কারণে এতগুলো ইলেকট্রিক ডিভাইস নষ্ট হলেও ভবন নির্মাণকারী প্রবালকে বলার পরও তিনি কোন কর্ণপাত করছেন না।বাধ্য হয়ে আমরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছি। এখনও তিনি গায়ের জোড়ে বলছেন তার ওয়েল্ডিংয়ের জন্য এসব নষ্ট হয়নি বরং আমাদের বৈদ্যুতিক সংযোগ লুজ থাকায় এমনটা হয়েছে। তার এ ভবন নির্মাণে ইতোপূর্বেও নানা অঘটন ঘটেছে। কিন্তু তারপরও তিনি বেপরোয়া। কোনরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই তিনি এমনভাবে বহুতল ভবন তৈরী করছেন। এতে যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশংকার মধ্যে দিয়ে আমরা ব্যবসা করছি।

পপুলার হোমিও ফার্মেসীর ডাঃ এরশাদ হোসেন বলেন, এভাবে কি করে তিনি দোকানের সাধারণ বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে উচ্চ ভোল্টেজের ওয়েল্ডিং মেশিন চালাচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। একেতো অবৈধভাবে রেলওয়ের ও পৌরসভার কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়েই ভবন নির্মান করা হচ্ছে। তার উপর বিদ্যুৎ ব্যবহারেও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেছেন। আমরা আমাদের ক্ষতিপুরণ দাবি করছি। এখানে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নিবে?

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন যে, রেলওয়ে ও পৌর কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে যেমন অবৈধ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তেমনিভাবে বিদ্যুৎ অফিসকে ম্যানেজ করেই তিনি এমন অবৈধ কাজ করছেন। যে কারণে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা বিক্ষোভ বা অবরোধ না করলে তারা এখনও আসতেন না।

সৈয়দপুর নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানীর সাব ইঞ্জিনিয়ার ও এই বিদ্যুৎ লাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় জানান, মূলতঃ তিনি যে মেশিন ব্যবহার করছেন তা ৪৪০ ভোল্টেজের। এজন্য তিন তারের সংযোগপূর্ণ লাইন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু তিনি ওভারলোড ব্যবহার করায় অন্যান্য সংযোগে এর প্রভাব পড়ায় এমনটা ঘটে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি দেখছি। আপাতত ওয়েল্ডিংয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। আবারও যদি তিনি এ সংযোগে ওয়েল্ডিং মেশিন ব্যবহার করেন তাহলে তার সকল মালামাল জব্দ করা হবে।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানীর নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন এর ০১৭৫৫৫৮৪৮৯৬ মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে ভবনের মালিক ইমতিয়াজ প্রবালের ০১৭০৭৪৮১৭৪০ নম্বরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যুৎ অফিসের সাথে কোন প্রকার কথা বলিনি। দোকানের যে সংযোগ আছে তা দিয়েই ওয়েল্ডিং মেশিন চালানো হয়েছে। এতে তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ২২০ ভোল্টের সংযোগে কিভাবে ৪৪০ ভোল্ট মেশিন চালালেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করবো।

সৈয়দপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র জিয়াউল হক জিয়া বলেন, আমরা কোন প্রকার নকশা অনুমোদন দেইনি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তিনি এ কাজ করছেন। রেলওয়ের জমি হওয়ায় আমরা বাধাও দিতে পারছিনা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী (সেতু/ময়দান) মোঃ আহসান উদ্দীন বলেন, রেলওয়ের কাছ থেকে পৌরসভা যে ২৫ একর জমি লিজ নিয়েছে এটা সেখানেই করা হচ্ছে। অতএব এটা দেখার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের।

আনন্দবাজার/শাহী/মনন

সংবাদটি শেয়ার করুন