মঙ্গলবার মধ্যরাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাত দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বরিশাল নগরীর রুপাতলি হাউজিং এর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়। এসময় হাউজিং এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, অজ্ঞাত সংঘবন্ধ প্রায় ৫০ জন লোক রড, লোহার পাইপ, রামদা নিয়ে রুপাতলি হাউজিং এর ২৩ নং রোডে মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানের বাসার সামনে আক্রমন চালায়। এসময় দুজনকে ধরে নিয়ে বেধর পিটিয়ে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। এই ঘটনা ফেসবুকে প্রকাশ পেলে আশেপাশের শিক্ষার্থী ছুটে আসলে তারাও হামলার শিকার হন।
হামলায় গুরুতর আহত ১২ শিক্ষার্থীকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, মার্কেটিং বিভাগের শেখ সজিব, রসায়ন বিভাগের শাহেদ পারভেজ তানিম ও সোহানুর সোহান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, গণিত বিভাগের রাজিব ও ফাহিম , মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ইকবাল হাসান ও নুরুল্লা সিদ্দিকী, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের জয় গুরুতর আহত হয়।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল নগরীর রূপাতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারের স্টাফ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত ও এক ছাত্রীকে লাঞ্ছনার অভিযোগ প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার সূত্র ধরে গভীর রাতে আবারো শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
রাতে হামলার শিকার হওয়া এক শিক্ষার্থী জানান , “এত রাতে পুলিশ আর ভাড়াটে গুন্ডারা কী নাটক শুরু করছে বুঝলাম না। পুলিশ আর কয়েকটা অচেনা পোলাপাইন আমাকে মারছে। আর আমার একজন ফ্রেন্ড কে ধরে নিয়ে গেছে। পুলিশ কলার ধরছে, জিজ্ঞেস করছে বাসা কই। আমি বললাম ৯ নাম্বার রোড। পুলিশ জিজ্ঞেস করছে এখানে কাজ কী, আমি বললাম এমনেই। এরপর জিজ্ঞেস করছে পড় কই,বললাম বরিশাল ভার্সিটি।এরমধ্যেই একজন বলে তোগোরেই তো খুঁজি। এরপরে মাইর শুরু পুলিশের সামনেই। কোন মতে বেঁচে আছি”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, “রাত ১ টার দিকে আমার সামনে দিয়া সন্ত্রাসীরা ১৫ থেকে ২০ টা মটর সাইকেল নিয়া গেল, হাতে লাঠি-সোঁটা নিয়া। আর বলতে বলতে গেল কেউ ডানে বামে তাকাবি না, শুধু মাইর হবে। তারা বলেন, আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ আসবে না। আর সবাইকে মাস্ক পরে নিতে বলছে।হায়! তখনো আমি বুঝতে পারিনি যে আমার ভাইদের ওপরই হামলা করতে যাচ্ছে ওরা।”
প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থীরা জানান, “মঙ্গলবার রূপাতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারে কথাকাটাকাটির সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ছুরি মারা হয়। সেজন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করে। রাস্তা অবরোধ চলাকালে এক ব্যক্তি রাজনৈতিক পরিচয়ে জোরপূর্বক অবরোধের বিরুদ্ধাচরণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন তাকে থামানোর চেষ্টা করলে একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সূত্র ধরে মধ্যরাতে ছাত্রদের মেস ও বাহিরে অবস্থানরত ছাত্রদের চাপাতি, রামদা, ছুরি ও জিআই পাইপ নিয়ে বারবার হামলা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত ও জখম হয়ে মেডিকেলে ভর্তি আছে। কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমারা খুবই শোচনীয় অবস্থার মধ্যে আছি। রূপাতলী হাউজিং এর ব্লক সি-তে আমাদের মেস সহ অন্যান্য মেসে হামলার ফলে অনেকে গুরুতর জখম। অনেক রক্তক্ষরণ ও জখম হওয়ার ফলে তারা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।”