ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে চলেছেন বি. এম. সাবাব

বি.এম.মুহিবুল ইসলাম সাবাব আর্ত মানবতার সেবায় এক মূর্ত প্রতীক। করোনার ভয় উপেক্ষা করে শীতকে তোয়াক্কা না করে দিন নেই, রাত নেই মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। মানব সেবার এই মহৎ উদ্দেশ্যের বিস্তারিত নিয়ে কথা বলছেন – শাহীদ আপন।

আনন্দবাজার: ছোটবেলা কেমন কেটেছে?

বি. এম. সাবাব: আলহামদুলিল্লাহ, আমার ছোটবেলা অসাধারণ সৃতিবহুল। ছোটবেলা যখন স্কুলে পড়তাম তখন থেকেই সফরের প্রতি আকর্ষণ ছিল, ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন স্থানে সুযোগ পেলেই সফর করতাম, নিয়মিত টেনিস খেলতাম, মার্শালাট শিখতাম এবং রাইফেলস ক্লাবের জুনিয়ার সদস্য ছিলাম। সুটিং প্যাক্টিস করতে আমার খুব ভাল লাগে আর প্রিয় খেলা ছিল বিলিয়াড পুল। আশা ছিল বড় হয়ে সেনাকর্মকর্তা হব এবং দেশের জন্য কাজ করব কিন্তু পরে আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আমি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান তাই ইসলামিক শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই পেয়েছি। ক্লাস ৮/৯ থাকা অবস্থাতে এলাকার বন্ধু বান্ধব এবং বড়ভাইদের নিয়ে আমরা “দুঃস্থ এবং জনকল্যাণ সংস্থা” নামক একটি সেবা সংস্থান গঠন করেছিলাম প্রতিমাসে ৫টাকা চাঁদা দিতাম এবং এলাকার দুঃখী মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করতাম, ঈদের সময় এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের দুধ-চিনি-সেমাই ইত্যাদি কিনে দিতাম। আসলে আমার ছোটবেলাটা অসাধারণ কেটেছে।

আনন্দবাজার: মানব সেবার কাজে কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কি?

বি. এম. সাবাব: খুব চমৎকার একটা প্রশ্ন। মানব সেবার প্রতিটি ধাপে ধাপেই প্রতিবন্ধকতা। মানব সেবার কাজে সকাল-বিকেল বা শীত-গ্রীষ্ম নাই, মানুষের বিপদ কখন আসবে আল্লাহ ব্যতীত কেউই জানেনা তাই ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মতন ২৪/৭ প্রস্তুত থাকতে হয়। যেমন নারায়নগঞ্জের তল্লা জামে মসজিদে রাতে হঠাৎ দুর্ঘটনাটি ঘটল সাথে সাথে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে গুরুতর আহতদের আনা হলো আমরাও সেখানে উপস্থিত হলাম। উল্লেখ করার মতন এমন ঘটনা অনেক আছে, আবার আমি বর্তমানে ঢাকাতে আছি কিন্তু সুন্দরবন এলাকাতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানল তখন সাথে সাথে প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে ছুটে চলা সত্যই অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমরা যতই কাজ করি আমাদের দেশের কিছু মানুষ পজিটিভকে প্রকাশ করেনা কিন্তু নেগেটিভকে প্রকাশ করতে যথেষ্ঠ পটু। কিছুসংখ্যক মানুষ প্রতিক্ষেত্রেই সমালোচনা করতে ভালবাসে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ কমেন্ট বক্সে গালিগালাজ পর্যন্ত করতে থাকে। আবার অনেকে আমাদের মানব কল্যাণমূলক কাজের অধ্যায়কে নিজেদের প্রতিদ্ধন্ধী মনে করে অথচ প্রতিদ্ধন্ধীতার কিছুই নেই এখানে। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো।

আনন্দবাজার: বি এম সাবাব ফাউন্ডেশন যাত্রার গল্প শুনতে চাই-

বি. এম. সাবাব: বি এম সাবাব ফাউন্ডেশন যাত্রার গল্প আসলে অনেক, অনেকগুলি ঘটনার সমষ্টি আজকের এই ফাউন্ডেশন। আমি ব্যক্তিগত ভাবেই অনেক সময় অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতাম, এই শিক্ষা আমার ছোটবেলা থেকে, যাকে ইসলামের ভাষায় একরামুল মুসলিমিন বলে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও অনেক ছাত্র-ছাত্রীর অপারেশনের জন্য, ভর্তি হবার টাকা নেই তাই প্রক্টর স্যারের কাছে অভাবী শিক্ষাথীকে নিয়ে বিভিন্নভাবে সহায়তার চেষ্টা করা, কেউ বিপদে থাকলে সাধ্যমতন পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা সহ আরো বিভিন্ন সেবার কাজ করার চেষ্টা করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীদের তাদের সমস্যা মোতাবেক পাশে দাঁড়িয়েছি। এইকাজগুলি করতে করতে একসময় হঠাৎ করে কভিড-১৯ এর বিষাক্ত ছোবল চলে আসল। হাজার হাজার মানুষ চাকুরিচ্যুত হলো, দিনমজুর কর্মীরা কাজ হারাল, দিন এনে যারা দিন খায় তাদের খাবারের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেল। তারপরের ঘটনাগুলি আমাদের কারোই অজানা নয়। এই সময় প্রতিদিন আমার ফোন এবং ফেসবুক ইনবক্সে সাহায্য চেয়ে বার্তা আসত, অনেক চেনাজানা মানুষের বার্তা আমাকে বড় পরিসরে ভাবিয়ে তোলে, স্বপ্ন দেখি একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার, যেই ফাউন্ডেশন থেকে সমাজের বঞ্চিত অসহায় এতীম সবাই সাহায্য পাবে সেই থেকে আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজ নেমে যাই, এইটাই আসলে ফাউন্ডেশনের মূলগল্প ।

আনন্দবাজার: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?

বি. এম. সাবাব: আসলে ছোটবেলা যখন তাবলীগে যেতাম তখন তাবলীগের ৬ নাম্বার শিখেছিলাম এর মধ্যে একরামুল মুসলেমিন অন্যতম। একারামুল মুসলেমিন মানে এক মুসলমান ভাই আরেক মুসলমান ভাইয়ের সেবা করবে। আবার জীবের প্রতি দয়া করা আমাদের ইসলাম ধর্মের অন্যতম শিক্ষা। আসলে ধর্মীয়জ্ঞান আমার অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস।

আনন্দবাজার: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ?

বি. এম. সাবাব: ভবিষ্যতে আমরা শুধু দেশের মধ্যেই নয় সারা বিশ্বের অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। সারা বিশ্বের এতীম শিশুদের জন্য কাজ করতে চাই।বিশ্বের যেখানেই মানবতার বিপর্যয় আসবে সেখানেই সবার আগে আমাদের টিম ছুটে যাবে এই স্বপ্ন দেখি, যদিও কাজগুলি অনেক চ্যালেঞ্জিং ঠিক কিন্তু অসম্ভব নয়। যেমন রেডক্রস, অক্সফাম, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল যেভাবে মানবতার জন্য কাজ করছে বিশ্বব্যাপী ঠিক এমনভাবেই বি.এম.সাবাব ফাউন্ডেশন কাজ করতে চায়।

আনন্দবাজার: সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?

বি. এম. সাবাব: আসলে আমি ব্যক্তিগত কাজের চাইতে সমষ্টিগত কাজের দিকে বেশি প্রাধান্য দেই। করোনা চলাকালিন সময়ে যখন সকলে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে মাস্ক পড়ে সময় কাটাইত তখন আমরা ঢাকা শহরের সকল বস্তিতে বস্তিতে সফর করতাম খাদ্য নিয়ে, তাদের ঘরের বাজার করে দিতাম স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। যখন মানুষ লকডাউনে স্বার্থপরের মতন নিজেদের খাবারের ব্যবস্থা করা নিয়ে চিন্তিত থাকত তখন আমরা রান্না করা খাবার নিয়ে ঢাকা শহরের প্রতিটি গলিতে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। যাদের চাকুরি চলে গিয়েছিল তাদের বাসায় বাসায় আমরা মাসের বাজার করে দিয়ে আসতাম। করোনার বিষয়টি শেষ হতে না হতেই উত্তরবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা শুরু হল। তখন আমার একদিকে করোনার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংগ্রাম করছি অন্যদিকে বন্যায় প্লাবিত জনপথের দিকেও রওনা দিয়েছি। সব মিলিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার হচ্ছিল। এর মাঝেই আসল শীতকাল, মানুষের চাকুরী নেই ব্যবসা নেই যারা টাকা দিয়ে শীতবস্ত্র কিনতে অক্ষম তাদের জন্য শীতবস্ত্র কম্বলের ব্যবস্থা করেছি , সমস্ত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শীতের কম্বল বিতরণ করেছি যেই কর্মসূচী এখনো চলমান। এছাড়াও এতীমখানার শিশুদের জন্য প্রতিমাসের শুরুতে চালের বস্তা বিতরণ সহ তাদের শিক্ষার কিতার সহ শিক্ষা উপকরব বিতরণ করা হচ্ছে ।

আমি সকলের কাছে দোয়া চাই, সকলের কাছে সহযোগিতা চাই যেন এই ফাউন্ডেশন দেশের এবং সমগ্র বিশ্বের মানুষের কল্যাণে সর্বদাই আগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং নতুন নতুন পরামর্শ দিয়ে পাশেই থাকবেন আশাকরি।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন