কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) এবং আবাসিক মেডিকেল আফিসারের সরকারি কোয়াটারে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার একাব্বর আলীসহ চার কর্মচারীকে গ্রেফতার করে।
পরে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাদের প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফুলবাড়ী থানার ওসি রাজীব কুমার রায়।
তবে সদ্য বিদায়ী ইউএইচএফপিও ডা. শামছুন্নাহার দাবি করেছেন, এম্বুলেন্স ড্রাইভার একাব্বরের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ায় তাকে হত্যা করাসহ তার বাসার জিনিসপত্র চুরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তিনি ওই সময় বাসায় না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন।
পুলিশ ও ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বুধবার( ১৩ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় ইউএইচএফপিও ডা. শামছুন্নাহার ও আরএমও ডা.ফজিলাতুন্নেছা বর্ণা কোয়াটারের দরজায় তালা দিয়ে অফিসে যান। দুপুর ২টায় আরএমও ডা. বর্ণা কোয়াটারে ফিরে দেখতে পান কোয়ার্টারের দুই রুমের দরজার তালা কাটা, রুমের জিনিসপত্র এলোমেলো। খবর পেয়ে ডা. শামছুন্নাহার তার কোয়াটারে গিয়ে দেখতে পান তার ঘরের শো-কেচের ড্রয়ারে রাখা নগদ টাকা ও তার ব্যবহৃত স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল গায়েব।
পরে তিনি বিষয়টি পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। পুলিশ এসে হাসপাতাল চত্বরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বুধবার রাতেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার একাব্বর আলীসহ ৪ জনকে আটক করে। আটককৃত অন্যান্যরা হলো, এ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বরের ব্যাক্তিগত এম্বুলেন্সের সহকারী শাহ আলম (৫০), হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রদীপ চন্দ্র দাস (২৭) এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বেচ্ছাসেবী রফিকুল ইসলাম অপি (২৭)।
ইউএইচএফপিও ডা. শামছুন্নাহার শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে জানান, এই চুরি ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। এ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর মূলত ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে তার অপরাধের রাজ্য বানিয়েছিল। সে বিভিন্ন অপকর্মের হোতা। বিভিন্ন অনিয়ম করে উপার্জন করে সে নিজের মালিকানাধীন একটি এম্বুলেন্স ও দুইটি মাইক্রোবাসের মালিক হয়েছে। হাসপাতালের সরকারি এম্বুলেন্স নষ্ট দেখিয়ে তা মেরামতের নামে সে লুটপাট চালাচ্ছিল। সরকারি এম্বুলেন্স বিকলের কথা বলে সে রোগীদেরকে নিজের এম্বুলেন্সে করে পরিবহণ করতো। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছিল।
এই চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন,‘ তার ( একাব্বরের) এসব অনিয়মে বাধা দেওয়ায় সে আমাকে হত্যা করার পরিকল্পনাসহ আমার বাসার জিনিসপত্র চুরি করিয়েছে। চুরিতে অংশ নেওয়া প্রত্যেকেই তার সহযোগী।’
এ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বরের নিজস্ব মালিকানাধীন মাইক্রোবাসের চালক রফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগী রাশেদুল ইসলাম এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমএলএসএস মতিয়ারসহ আরও কয়েকজন এই পরিকল্পনায় জড়িত রয়েছে দাবি করে ডা. শামছুন্নাহার আরও বলেন, ‘আমি সদ্য ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে বদলি হয়ে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেছি। গতকাল (১৩ জানুয়ারি) ফুলবাড়ীতে আমার শেষ কর্মদিবস ছিল। গত ৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের একটি ওষুধের দোকানে বসে একাব্বর ও তার সহযোগীরা আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলে জানতে পেরেছি। আমি ইতোমধ্যে ফুলবাড়ী থানায় একটি চুরির মামলা করেছি। তবে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করায় আমি আমার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’
সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, নব নিযুক্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার (ওসি) রাজীব কুমার রায় জানান, প্রাথমিকভাবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আটককৃত শাহ আলম ও প্রদীপকে চিহ্নিত করা গেছে। ওই দুইজনসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রিমান্ডের প্রথম দিন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জড়িত সকলকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চারদিনের রিমান্ড শেষে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হবে।
আনন্দবাজার/শাহী/জাহাঙ্গীর