লালমনিরহাটে কৃষি বিভাগের কোন তৎপরতা না থাকায় কীটনাশকের খুচরা বিক্রেতার দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিম্ন মানের ভেজাল কীটনাশক। আর এসব কীটনাশক কিনে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোম্পানীর কীটনাশক অপেক্ষা ভেজাল কীটনাশক অর্ধেকের কম মূল্যে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা এদিকে ঝুকছেন। অপর দিকে ভেজাল কীটনাশ বিক্রিতে তুলনামূলক দ্বিগুন মুনাফা আসায় লালমনিরহাট জেলার অধিকাংশ গ্রামের ছোট ছোট কীটনাশক খুচরা বিক্রেতারা এ সকল ভেজাল কীটনাশক বিক্রিতে বেশি উৎসাহী হয়ে উঠছেন। ভালো কীটনাশক কোম্পানী সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা আর কীটনাশক ঔষধ সম্পর্কে সচেতনতা মূলক কোন প্রচার-প্রচারনা না থাকায় কৃষকরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন।
অন্যদিকে কৃষি বিভাগ এসব নিম্ন মানের ভেজাল কীটনাশক প্রস্তুতকারক, সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় অসাধু চক্রটির দিনদিন দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। তবে এসব ভেজাল কোম্পানী’র পণ্যের প্যাকেটে নেই কোন রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, এমনকি নেই কোম্পানীর পূর্ণ ঠিকানা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কীটনাশকের খুচরা বিক্রেতা জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিডিআর হাট, কলেজবাজার, আদিতমারী উপজেলার খাতাপাড়া মাঝার, সাপ্টিবাড়ী ও কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট বাজার এলাকায় রয়েছে ভেজাল কীটনাশক তৈরীর সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্র। এসব এলাকায় ভেজাল কীটনাশক প্রস্তুত হয়ে প্যাকেটজাত করা হয়ে থাকে আর রাতারাতি গ্রামা লে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কৃষক জামান, সিদ্দিক ও রতি দাশ জানান, কৃষি বিভাগ থেকে সচেতন না করায় ভেজাল কীটনরাশক কিনে অনেক কৃষককে প্রতারিত হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যদি ভেজাল কীটনাশক সম্পর্কে কৃষি বিভাগের লোকজন আগেই জানিয়ে দেন এবং কোন কীটনাশক ব্যবহার করা দরকার তা জানালে কৃষকরা আর ভেজাল কীটনাশক কিনে প্রতারিত হবেন না।
কীটনাশকের খুচরা বিক্রেতারা জানান, কৃষকদের কম মূল্যে কীটনাশক কেনার এই প্রবনতাকে পুজি করে নিম্ন মানের ভেজাল কীটনাশকের সিন্ডিকেট চক্র তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একদিকে কৃষকরা ব্রান্ড কোম্পানীর পন্যের চেয়ে অর্ধেকের কম মূল্যে ভেজাল পন্য পায়। তাই তারা প্রতিনিয়ত কম মূল্যের কীটনাশক কিনতে চায়। ফলে কৃষকদের চাহিদা মেটাতে ব্রান্ড কোম্পানীর কীটনাশকের পাশাপাশি নিম্ন মানের কীটনাশক দোকানে রাখতে হয়। তবে ব্রান্ড কোম্পানীর কীটনাশক বিক্রি করে যে লাভ হয় তার চেয়ে নিম্ন মানের কীটনাশক বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভ হয়।
ব্রান্ড কোম্পানীর কিছু প্রতিনিধিরা জানান, নিম্ন মানের কীটনাশক কোম্পানীর কোন বিক্রয় প্রতিনিধি নেই কিন্তু তারা অধিক পরিমানে ব্যবসা করছেন কালো বাজারে। কৃষি বিভাগকে নিম্ন মানের কীটনাশক পন্য ও কোম্পানী সম্পর্কে অবগত করা হলেও রহস্যজনক কারনে নেয়া হচ্ছে না কোন ব্যবস্থা আর এ কারনে সিন্ডিকেট চক্রটিও নির্ভয়ে ব্যবসা জালিয়ে যাচ্ছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামীম আশরাফ জানান, নিম্ন মানের কীটনাশকের ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছে। কিন্তু গোপনে কোথায় কি হচ্ছে তা বলতে পারছিনা। তবে কোথায় কোথায় নিম্ন মানের কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে সে তথ্যগুলো পেলে মাঠ পর্যায়ে আরো বেশি তদারকি প্রয়োগ করা যাবে।
আনন্দবাজার/শাহী/সমাপ্ত