ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহামারির আধার কাঁটিয়ে নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

মহামারি'র আধার কাঁটিয়ে নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত প্রায় পুরো পৃথিবী। বিশ সালটা যেন অনেকটা বিষফোঁড়ার মতই অভিশাপ নিয়ে এসেছে এ ধরার জন্য। করোনায় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পারা-প্রতিবেশী অনেককেই হারিয়ে যেন শোকে স্তব্ধ এই বিশ্ব। তবুও সব বিপদ মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে আবার নতুন করে নতুন জীবনের শুরু করতে হবে সবাইকে। নতুন বছর নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা দৈনিক আনন্দবাজার কে জানাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি- এম এ সাঈদ চৌধুরী।

রাফিয়া রহমান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
রাফিয়া রহমান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

২০২০ সাল, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির আরেকটি বছর। আকস্মিক এক মহামারির থাবায় আমাদের স্বাভাবিক জীবন যেন থেমে গিয়েছে কিন্তু সময় থামেনি, বেঁচে থাকার তাগিদ বরং আরও ত্বরাণিত হয়েছে। এবারের অপ্রাপ্তির পাল্লা নিঃসন্দেহে অনেক ভারী কিন্তু প্রাপ্তির খাতা শূন্য নয়। যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ততা ধীরে ধীরে আত্মউপলব্ধিতে রূপ নিয়েছে। এই আত্মউপলব্ধি আমাদের জীবনকে নতুন করে শুরু করতে খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। শুধু নিজেকে নিয়ে ভালো থাকা সম্ভব না, সকলকে নিয়ে ভালো থাকতে হবে।

সমির আরফিন শুভ, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সমির আরফিন শুভ, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

“মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে’ বাক্যটির অন্তর্নিহিত মর্মার্থই নতুন বছরে আলোর দিশারী জাগাতে পারে। প্রায় দীর্ঘ নয়টি মাস আলো-আঁধারির আবেশে কাটিয়ে নতুন বছরে এসে উপস্থিত হয়েছি। আমাজনের গভীর অরণ্যে সূর্যের একফোঁটা আলোকরশ্মি এসে যেমন উদ্ভিদ ও প্রাণীদের জীবনধারনে সহায়তা করে তেমনি বোধ করি করোনাকালীন এই ঘরবন্দী অন্ধকারজীবনে ব্যক্তিমানসে আলোকরশ্মিরূপ আত্মনির্ভরশীলতা, সচেতনতা,পারস্পরিক সহযোগিতা, ঘরবন্দী থাকা স্বত্তেও জীবনে আনত গতিশীলতা ইত্যাদি তৈরি হয়েছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি অনায়সে মোকাবেলা করার প্রত্যাশা রাখি।

রাকিবুল হাসান, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রাকিবুল হাসান, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বলতে বলতে চলে এলো নতুন আরেকটি বছর, সাথে করে নিয়ে আসলো নতুন আশা ও নতুন স্বপ্ন। দীর্ঘ ৯ মাস গৃহবন্দী থেকে ২০২০ সাল যে কিভাবে চলে গেল সে যেন এক চোখের পলক মাত্র। কত স্বপ্ন, কত আশাকে ঘিরে পদর্পণ করেছিলাম ২০২০ সালে, ঠিক এই দিনে। কিন্তু কোন এক আঁধার এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে গেল ২০২০ সালের সকল আশা ও স্বপ্নকে। ২০২০ সালের মহামারি প্রকৃতপক্ষে পুরো পৃথিবীকে একটি শিক্ষা দিয়ে গেলো। ২০২০ সাল কেড়ে নিয়েছে কতশত মানুষের আপনজনকে, দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গেছে শত শত পরিবারকে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়েছে বিপদগ্রস্ত, দেশের অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়েছে। এই সকল গ্লানি, দূরাবস্থা যেন দূর করে দেয় নতুন বছর ২০২১। শুভ হোক নতুন বছরের শুরুটা।

দেওয়ান জেনিন আঞ্জুম মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দেওয়ান জেনিন আঞ্জুম, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌছনোর। নিজ গতিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কে না চায় তার স্বপ্নের ঘুড়িকে আকাশে উড়াতে! আর দশটি সাধারণ মানুষের মতো আমাদের মতো শিক্ষার্থীদেরও রয়েছে অনেক অনেক ছোটখাটো স্বপ্ন, অনেক অনেক প্রত্যাশা, বরংচ বলা যায় তুলনামূলক একটু বেশিই। তবে এই স্বপ্নের পথে যেন ২০২০ এক বিভীষিকার নাম! মহামারির কবলে পরে এই ছোটখাটো স্বপ্নগুলো পূরণের থেকে বেঁচে থাকাটাই যেন অগ্রাধিকার পেয়ে যায়। মহামারির ভীতি যেন সকলকেই কমবেশি গ্রাস করেই নিয়েছে। তবে মানুষ তো খাদ্য, বস্ত্রের মতো শারীরিক মৌলিক চাহিদাগুলোর মতো স্বপ্নপূরণ ও মনের এক মৌলিক চাহিদা বলেই মনে করি আমি। ।

জাকির হোসেন জীবন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাকির হোসেন জীবন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

করোনার আঘাতের আগের জীবন আর পরের জীবন যেমন এক হবে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এ ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। করোনার আগে যে গতিতে পড়াশোনা হয়েছে সেখান থেকে বের হয়ে অবশ্যই গতি বাড়াতে হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে সেশন জোট কমিয়ে আনার ব্যাপারে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঐক্যমতে পৌছাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি ফেব্রুয়ারি/মার্চে খোলে সেক্ষেত্রে ২/৩ মাস ক্লাস রুমে ক্লাস নিয়ে ফাইনালের আয়োজন করলে শিক্ষার্থীদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে এবং ২/৩ মাস সময় লাগলেও বড় সেশন জট কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব।

 

 

 

মারিয়া অনি বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মারিয়া অনি, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা…
২০২০ এর মতো এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সাল কাটানোর পরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ন্যায় এই প্রত্যয়ই আমাদের মনে জেগে ওঠে। অন্যান্য বছরের মত যদিও এ সালটিও অনেক উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হয়েছিল তেমনটি আসলে হয় নি নানান প্রতিকূলতার কারনে। যদিও বছরটা শুরু হয়েছিলো আমার স্নাতকোত্তরের ক্লাস দিয়ে। ২০২০ সালের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহুর্ত ছিলো আমাদের পাহাড় ও সমুদ্র মন্থনের সেই দিনগুলি। ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার খবর ছড়িয়ে পরে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে দেশজুড়েও এর আগ্রাসী ছোবল বিস্তৃতি লাভ করে। স্থবির হতে লাগলো আমাদের জনজীবন। বন্ধ হয়ে গেলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। লকডাউনের আওতায় চলে গেলো দেশ। এইভাবেই ঘরবন্দী একটা বছর কেটে গেলো।

আনন্দবাজার/শাহী/সাঈদ

সংবাদটি শেয়ার করুন