রাঙ্গুনিয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা। উপজেলার ১ পৌরসভাসহ ১৫ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে স্থাপিত বিদ্যুতের লাইন মানুষের জন্য যেন মৃত্যুফাঁদ। সাধারণ চলাফেরায়ও দুর্ঘটনা হচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ বছরে বিদ্যুৎ লাইনের তারে জড়িয়ে অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন। তবুও কর্তৃপক্ষের ভ্রুক্ষেপ নেই। ব্যাপকহারে দুর্ঘটনা লেগে থাকা সত্ত্বেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অপরিকল্পিতভাবে লাইন স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৮০টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে। তার মধ্যে ২৫ গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জন্য বিপজ্জনক।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ঘরের ছাঁদ ঘেঁষে কিংবা সড়কের পাশে, গাছের ডালে ও খাল-বিল ও নদী-নালার উপর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। প্রাত্যহিক কাজকর্ম বা চলাফেরা করতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে নিহত হচ্ছে মানুষ। এমনকি গাছের স্পর্শে এসেও দুর্ঘটনার শিকার হয় বলে জানা গেছে।
সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ জানান, চলতি বছরের ২ জুলাই ইউনিয়নের মীরেরখীল হাজীবাড়ি গ্রামের আব্বাস জসিম উদ্দিন (৩১) ছেলেকে বাঁচাতে বিদ্যুৎ লাইনের তারে জড়িয়ে নিহত হয়েছেন।
চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আজগর জানান, ২০১৮ সালে ১২ মে চাদের উপর খেলতে গিয়ে ইউনিয়নের বনগ্রামে ছাত্রী আয়শা সিদ্দিকা (১২) নামের এক সপ্তম শ্রেণী বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মারা যায়। ১০ জুন বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে চন্দ্রঘোনা দোভাষি বাজারে সাইফুল আলম নামের এক ট্রাক মিস্ত্রির মৃত্যু হয়।
এছাড়াও ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর বনগ্রামে মো. ইউসুফ নামের এক সিএনজি অটোরিকশা চালক, ১০ এপ্রিল পৌরসভায় ইলেকট্রিশিয়ান বদিউল আলম (৪৫), ২০১৫ সালে উপজেলা কোদলা চাবাগানে সুশান্ত কর্মকার (৫০) ও তার ছেলে সাজু কর্মকার (১৭) বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা যায়। এভাবে গত ৫ বছরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে ৭ ব্যক্তি মারা যায়। আহত হয় ১৫-২০ জন। পুড়ে যায় ১০টি বাড়ি।
রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. আলী শাহ জানান, গত ২০০০ ও ২০২০ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে প্রায় শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘরের ছাঁদে কিংবা গাছে ফল পাড়তে উঠে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন অনেকে। ঝড় বৃষ্টিতে গাছপালার ডাল ভেঙ্গে বিদ্যুতের তার ছিড়ে সড়কের উপর পড়ে। অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ লাইনের কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এর দায়দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুৎ নেয় না।’
এ ব্যপারে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ রাঙ্গুনিয়া কার্যালয়ের ডিজিএম মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার প্রায় ৮০ গ্রামে ৮৫০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন রয়েছে। স্থাপিত এসব বিদ্যুৎলাইন দীর্ঘদিনের পুরনো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের স্থাপিত লাইনের স্থলেই লাইন পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।এ কারণে বিদ্যুৎ লাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব লাইনে এ পর্যন্ত যেসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা বেশিরভাগই অসতর্কতার কারণে ঘটেছে। একটু সতর্ক হলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। অন্যদিকে জমির মালিকদের বাঁধার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করতে হয় অনেক সময়। তবে ঝুঁকি এড়াতে সপ্তাহের ২-৩দিন পর এলাকায় গাছের ডালপালা কেটে দেওয়া হয়। এছাড়া ঘরের ছাঁদের ওপর টানানো লাইন পরিবর্তন করে ঝুঁকিমুক্ত করার চেষ্টাও চলছে।’
আনন্দবাজার/শাহী/মতিন