ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারের বুকে এক টুকরো গবিসাস

কক্সবাজারের বুকে এক টুকরো গবিসাস

”চান্দের বাত্তির কসম দিয়া ভালোবাসিলি,
সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি,
এখনতো চান্দেও চিনে না, আমারে সূর্যেও চিনেনা!
চিনবো কেমনে যে চিনাইবো সেওতো চিনে না”

গান শুনে পুরনো প্রেমের স্মৃতি মনে পরছে? নাকি চান্দের দেশে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে? আমার কিন্তু এর কোনোটাই হচ্ছে না। মনে পড়ে যাচ্ছে সম্প্রতি গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) কক্সবাজার ভ্রমণের আনন্দঘন মূহুর্তগুলো।

২০২০ সালটি অনেকটা লজ্জাবতী গাছের পাতার মতো! যাকে স্পর্শ করলে তা সহজেই নেতিয়ে পড়ে। বর্তমান সালটিও যেন করোনা ভাইরাসের স্পর্শে নেতিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ কয়েকমাস লকডাউনে থাকার পর মন যখন আর ঘরে বসতে নারাজ, এমনই একটি সময়ে সকল হতাশাকে পেছনে রেখে গবিসাস টিম বার্ষিক ভ্রমণের আয়োজন করে। এই ভ্রমণের জন্য নির্বাচন করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে। এতে অংশগ্রহণ করেন গবিসাসের সপ্তম কার্যনির্বাহী কমিটির বর্তমান সদস্যগণ, একইসাথে ভ্রমণে যুক্ত হন গবিসাসের সাবেক সদস্যরাও। প্রাক্তন ও বর্তমানের মিশ্রনে কক্সবাজারের বুকেও যেন তৈরী হয় গবিসাসের মিলনমেলা।

ভ্রমণ মানেই নতুন কিছু অভিজ্ঞতার যোগফল। কক্সবাজার ভ্রমণও তার ব্যতিক্রম নয়। যাত্রার শুরুতেই গাড়ির চাকা পাঙ্কচার সিনেমার কথা মনে করিয়ে দিলেও, গবিসাস টিমের সাথেও সিনেমার এই দৃশ্যটির বেশ মিল ছিল। গল্প, আড্ডা, গান আর ঘুম বাবুর ঘুমের ঘুরেও যেন রাজপথে বিমানের ছোয়া দিয়েই দ্রুত বেগে কক্সবাজারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল আমাদের সেই গাড়িটি। সারারাত ভ্রমণ ক্লান্তির পর সকালে কক্সবাজারের বুকে পা রাখে টিম গবিসাস। আগে থেকেই হোটেল ঠিক করে রাখার ফলে থাকার ব্যবস্থা নিয়ে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি।

গবিসাস টিম

সকালের নাস্তা শেষ করে হোটেলে বিশ্রাম যেন সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল করে তুলছিল সবাইকে। তাই ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে দুপুরের খাবার খেতে না খেতেই গবিসাস টিমের যাত্রা শুরু হয় উত্তাল সাগরের গর্জন শুনতে। যাত্রাপথে লাবনী পয়েন্টের বাহারী সাজসজ্জার দোকান আর শুটকি মাছের গন্ধ যেন স্বাগতম জানাচ্ছিল কক্সবাজারের বুকে। বীচে প্রবেশ করেই যেন সবাই ঢেউগুলোর প্রেমে পরে যায়। বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গীতে ছবি তুলতে থাকে সবাই। কেউ কেউ বিশাল সাগরের বুকে নিজের নামটি লিখতেও যেন ভুল করে না। হঠাৎ করেই নিজেদের উপস্থিতি ভিন্নভাবে জানান দিতে গ্রুপ নাচের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাত্র কিছুক্ষণের অনুশীলনের মাধ্যমে চান্দের বাত্তির কসম দিয়া যেই ভালোবাসায় জড়িয়েছিলেন প্রেমিকা, তার নিষ্ঠুর বিদায়ের কথা সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেন টিম গবিসাস। এরপর হাসি, আড্ডা, আনন্দ শেষে সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য্যের স্মৃতিকে পকেটে করে হোটেলে রওনা হয় সবাই।

পরেরদিন মিশন ছিল মহেশখালী! বিভিন্ন গাছের মিশ্রনে এই দ্বীপটি যেন সুন্দরবনের জমজের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। স্পিডবোট থেকে হঠাৎ করে কেউ প্রবেশ করলে বুঝতেই পারবে না এটা মহেশখালী নাকি সুন্দরবন। সারাদিন ঘোরার পর ‘মহেশখালীর পান খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম’ জনপ্রিয় এই গানটি গাইতে গাইতে সবাই হোটেলে ফিরে যায়।

তৃতীয় দিনে ভিন্নমাত্রা যোগ হয় সুগন্ধা বীচে। সাগরের ঢেউয়ের সাথে সাথে টিম গবিসাস যেন একই সুরে গর্জন দিতে থাকে। হাসি আড্ডায় মুখরিত পরিবেশটি যেন আরও আনন্দঘন হয়ে উঠে। গ্রুপ ছবিতে টিম গবিসাস যেন নতুনরূপে সাজে। গোসল শেষে হোটেলের পথ ধরা। রাতে পুনরায় বীচে এসে উত্তাল সাগরের গর্জন যেন কান মাতিয়ে রাখতো। শীতল বাতাস বুকে এসে দোলা দিয়ে যায়, অন্যদিকে জোয়ারের সময় ঢেউ এসে যখন পায়ে স্পর্শ করে যায় মন তখন আর বসতে চাই না কোথাও। চতুর্থ দিন ইনানী সমুদ্র সৈকত অার হিমছড়ির রূপরস দেখে শেষ হয় গবিসাসের এবারের কক্সবাজার ভ্রমণ।

লেখকঃ মোঃ আশিকুর রহমান,
শিক্ষার্থী গণ বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন