অবশেষে আজ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বোট ক্লাব থেকে প্রথম দফায় ভাসানচর গেলো ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা।
আজ শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় নৌবাহিনীর রেডি রেসপন্স বাথ জেটি ও বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে তাদের নিয়ে কয়েকটি জাহাজ ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।
নৌবাহিনীর সূত্র জানায়, বোট ক্লাব জেটি থেকে তিনটি, আরআরবি জেটি থেকে দুটি ও কোস্টগার্ড জেটি থেকে সেনাবাহিনীর একটি জাহাজ করে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া দুটি জাহাজে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মালামাল। এ পক্রিয়াতে পর্যায়ক্রমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা নেওয়া হবে সেখানে।
রোহিঙ্গাদের এই দলটি থাকবে ভাসানচরের অত্যাধুনিক আবাসন প্রকল্পে। এরই মধ্যে ভাসানচরে মজুদ করা হয়েছে তিন মাসের খাদ্যপণ্য। প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করবে বেসরকারি সংস্থাগুলো। এজন্য ২২টি এনজিওর প্রতিনিধিরা কাজ শুরু করেছে ভাসানচরে।
এর আগে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে বাসে করে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। রাতে তাদের রাখা হয় পতেঙ্গায় নৌবাহিনী রেডি রেসপন্স বাথ জেটি ও বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এর আগে বিভিন্ন সময় পালিয়ে আসা প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা আগ থেকে থেকেই ছিল কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায়। বর্তমানে ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে ।
কক্সবাজারের হাজার হাজার হেক্টর পাহাড় উজাড় করে রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্প তৈরী করা হওয়ায় ভূমিধসের আশঙ্কা ছিল শুরু থেকেই। সাথে যুক্ত হয়েছে নিরাপত্তাজনিত সমস্যাও। যার কারণে কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
রোহিঙ্গারা ভাসানচরে স্থানান্তরে রাজি হচ্ছিলোনা অনেকদিন। আর এজন্য বেশ কিছু এনজিও ও বিদেশি সংস্থার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ছিল বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাকে ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধা দেখিয়ে আনার পর একটি অংশ সেখানে যেতে রাজি হয়।
কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শিবিরের তুলনায় ভাসানচরে ব্লকের তৈরি বাসভবনগুলো কেবল দৃষ্টিনন্দনই নয়, সেখানে পয়নিঃষ্কাষণ থেকে শুরু করে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা অনেক অনেক বেশি। সবুজ প্রকৃতিতে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগতো পাবেই পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিশুদের বেড়ে ওঠাটা স্বাভাবিক ও সুস্থ।
ভাসানচরের প্রকল্পটি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধানে তৈরী হয়েছে। দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় হাজার একতলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। আরও আছে ১২০টি বহুতল ভবন, যা সাইক্লোন শেল্টার ও অন্যান্য সময় অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সেখানে আবাসনের পাশাপাশি স্কুল, সেখানে স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার, হাসপাতাল করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আছে সোলার পাওয়ার। জেনারেটরের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থাও থাকবে। সেখানে রোহিঙ্গাদের আয়বর্ধকমূলক নানা প্রকল্পও নেয়া হয়েছে। খামারের কাজ, হাতের কাজ ছাড়াও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। ফলে আয় করতে পারবে রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হলেও মিয়ানমারের অসহযোগিতায় সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। দুই বার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও কোন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। তবে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর হলেও তাদের প্রত্যাবসনই সরকারের প্রধান লক্ষ বলে একাধিকবার দাবী করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আনন্দবাজার/শাহী/মতিন