চলতি বছরের এপ্রিলে নতুন করে আইপিও না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মূলত, একের পর এক দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দিয়ে সমালোচনার মুখে পরার পর থেকেই পুঁজিবাজারে আইপিও আসা বন্ধ রয়েছে। যদিও নতুন আইপিও দেয়ার লক্ষ্যে ‘পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫’ সংশোধন করেছে বিএসইসি। তবে এটি সংশোধনের পর প্রায় ৪ মাস কেটে গেলেও নতুন করে কোনো আইপিও অনুমোদন দেয়নি সংস্থাটি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন থেকে উচ্চ প্রিমিয়ামের আইপিও অনুমোদন পাওয়া ২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ইস্যুমূল্যের নিচে নেমে গেছে। ফেস ভ্যালুর নিচে নেমে গেছে ২৪টি কোম্পানি। আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর এমন দরপতনের কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে বর্তমান কমিশন। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়, একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফলে সার্বিক বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আইপিও অনুমোদন নিয়ে।
বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়ে গত ৩০ এপ্রিল কমিশন সভা করে নতুন আইপিও না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। সভায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত ৩০ এপ্রিল থেকে আইপিও সংক্রান্ত নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)-এর সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বাজারে আইপিও আসা উচিত। তবে সেই আইপিও অবশ্যই ভালো হতে হবে। ভালো কোম্পানির আইপিও আসলে বাজারের গভীরতা বাড়বে। বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া উচিত নয়। কারণ দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পেলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ভালো কোনো কোম্পানির আইপিও আটকে রাখিনি। কোনো ভালো কোম্পানি আইপিওর জন্য আবেদন করলে আপনারা তালিকা দেন, আমরা অনুমোদন দিয়ে দেব। ভালো কোম্পানি আইপিওর আবেদন করলে আমরা ৩০ দিনের মধ্যেই অনুমোদন দিয়ে দেব। খারাপ কোম্পানি আমরা পুঁজিবাজারে আসতে দেব না।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিএসইসি থেকে যখন আইপিও বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ছিল পাঁচ হাজার ২০২ পয়েন্ট। আইপিও বন্ধের পর বাজরে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। উল্টো অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে।
টানা পতনের কবলে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক চার হাজার ৬৮২ পয়েন্টে নেমে আসে। অর্থাৎ আইপিও বন্ধের পর গত ছয় মাসে ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক হারিয়েছে ৫২০ পয়েন্ট। মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। এক মাস ধরে ডিএসইর লেনদেন ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে আটকে রয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, মন্দাবাজারে নতুন করে আইপিও না দেয়া-ই ভালো। কারণ মন্দাবাজারে কোম্পানি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আসে। ভালো দাম না পাওয়ার পরও যদি কোনো কোম্পানি আসে তাহলে বুঝতে হবে ওই কোম্পানি দুর্বল। সুতরাং বাজার ভালো না হওয়া পর্যন্ত আইপিও না দেয়াই ভালো। এছাড়া মন্দাবাজারে ভালো কোম্পানি আইপিওতে আসতে চাইবে না।
বিএসইসির একটি সূত্র বলছে, ডিএসই সদস্যদের একটি অংশ প্লেসমেন্ট শেয়ার না পাওয়ায় আইপিওতে আসা কোম্পানি নিয়ে সমালোচনা করছে। যেসব কোম্পানিকে তারা দুর্বল বলছে, সেসব কোম্পানির প্লেসমেন্ট নেয়ার চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু প্লেসমেন্ট না পাওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএসইসির সমালোচনা করতে থাকে। মূলত এর পরিপ্রেক্ষিতে আইপিও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে শিগগিরই আইপিও দেয়া শুরু হবে।
আনন্দবাজার/ইউএসএস