যাবজ্জীবন মানে এখন থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যাবজ্জীবনকে ৩০ বছরও বোঝাবে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে আমৃত্যু কারাবাস বলে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউর রায়ে প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। অন্যপক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আইনজীবী শিশির মনির।
এর আগে গত বছরের ১১ জুলাই আপিল বেঞ্চ এ রিভিউ শুনানি শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। এর পর রিভিউ শুনানিতে চার অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এ এফ হাসান আরিফ, অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান, মুনসুরুল হক চৌধুরী ও এ এম আমিন উদ্দিন আইনি মতামত তুলে ধরেন।
২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর একটি হত্যা মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি নিয়ে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর পর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন আসামিরা। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’ আপিল বিভাগ এমন মন্তব্য করেন বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তবে ওই দিন অন্যান্য মামলার আসামির ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে কিনা? সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, সবার ক্ষেত্রে এ রায় প্রযোজ্য হবে কিনা, সেটি পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।
প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেন, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী দোষী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবেন, এটাই বিধান। এক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডটা হচ্ছে ব্যতিক্রম। যখন এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাউকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তখন এর কারণ অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ ৪৫ ধারার সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
আদালত আরও বলেন, যদি হাইকোর্ট বিভাগ বা এ আদালত (আপিল বিভাগ) মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন তখন এবং নির্দেশ দেন যে তার স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত এ কারাদণ্ড ভোগ করবেন, তখন এ ধরনের মামলায় সাজা কমানোর আবেদন গ্রাহ্য হবে না।
আদালতের এ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপরাপর আসামির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে বলা হয়।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস
