বাংলাদেশের বাইরে অর্থাৎ বহির্বিশ্বে প্রবাসী বাঙালীদের অবদান একেবারে কম নয়। উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইওরোপীয়ান দেশে বাঙালীরা অনেক মেধার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মুখকে উজ্জ্বল করেছে। সৃষ্টি ও উন্নয়নের সবকিছু বিষয় যেমন স্থপতি, চিকিৎসা, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, শিল্প সংস্কৃতিসহ অনেক বিষয়ে তাঁদের অনবদ্য অবদানের জন্য ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।
এই নিবন্ধে আমি এমন একজনের কথা বলব যিনি কোন বিখ্যাত ব্যক্তি নন। বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত জনপদে জন্মগ্রহণ করেও নিজের মেধা বলে ও স্বকীয় সাধনায় প্রশান্ত পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়াতে বাঙালীদের নাম উজ্জ্বল করেছেন। তিনি একজন মলেকিউলার জীবাণু বিজ্ঞানী হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অস্ট্রেলিয়া কমনওয়েলথ্ (ফেডারেল গভর্নমেন্ট) সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে হাসপাতল বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত আছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ১২টি দেশ ও পশ্চিম প্রশান্ত অঞ্চলের ১৮টি দেশের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছে অস্ট্রেলিয়া। তিনি উক্ত সংস্থার সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি মূলতঃ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও স্বাস্থ্যবিভাগ সমন্বয়ে যৌনরোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু বিশেষ করে গনোরিয়া ও জীবন সংহারী জীবাণু মেনিনজাইটিডিস নিয়ে গবেষণা করছেন। উল্লেখ্য প্রথমোক্ত জীবাণু ১৯২০ সালে পেনিসিলিন আবিষ্কারের পর থেকে একে একে সব এন্টিবায়েটিক এর বিরুদ্ধে সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি জীবাণুর জেনেটিক লেভেলে গবেষণা করে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূল কারণগুলো উদ্ঘাটনে সক্ষম হয়েছেন। জীবাণুর এই প্রতিরোধ ক্ষমতা বিভিন্নভাবে তৈরি হয়। প্রথমত: তৃতীয়বিশ্বে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই কড়া এন্টিবায়োটিক গ্রহণ। দ্বিতীয়ত: ঐ এন্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ না হতেই চিকিৎসা বিরতি। তৃতীয়ত: প্রাকৃতিক নিয়েমে টিকে থাকার জন্য ঐ এন্টিবায়োটিক ধ্বংস করার জন্য নিজের কোষে এনজাইম বা পাঁচক রস তৈরি করে। চতুর্থত: যাতে এন্টিবায়োটিক তার শরীরে না ঢুকতে পারে তার জন্য প্রতিরক্ষাব্যুহ বা শিল্ড তৈরি করে নিজেকে রক্ষা করা অন্যতম। কিন্তু এই প্রতিরোধের মুল যে প্রক্রিয়া তা আরও ভয়াবহ। বিজ্ঞানীরা জেনেটিক লেভেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জেনেছে যে, এই প্রচলিত এন্টিবায়োটিক থেকে সুরক্ষার জন্য জীবাণুরা তাদের মুলপ্রাণশক্তি ক্রোমোজোমের বিন্যাস পরিবর্তন করে বিশেষ বিশেষ জিন সংস্থাপন, সংযোজন, প্রতিস্থাপন, বিযোজন করে সে একটি অপ্রতিরোধ্য দানব বা মিউট্যান্ট এ পরিণত হয়। অর্থাৎ সেই দানব জীবাণু থেকে যে লক্ষ-কোটি জীবাণু তৈরি হয়ে তারও সেই দানব, যা এন্টিবায়োটিকের চক্র ভেঙে অকার্যকর করে দিতে পারে। আরও ভয়াবহ যে কারণটি বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন তার নাম হল প্লাজমিড। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির এক ধরনের জীবাণু থেকে তার সহ অবস্থানে থাকা নিরীহ জীবাণুর মধ্যে এই প্লাজমিড অনুপ্রবেশ করে সেই নিরীহ জীবাণুকে অতি দানবে পরিণত করে যা সম্পূর্ণরূপে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে।
এই বিজ্ঞানী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জার্নাল যেমন : জার্নাল অব এন্টিমাইক্রোবিয়াল কেমোথেরাপি। মাইক্রোবায়েলজি, প্যাথলজি, ডায়াগনোস্টিক মাইক্রোবায়েলজি এন্ড ইনফেকশন, ট্রপিক্যাল এশিম্যাল হেলথ এন্ড প্রোডাকসন সহ অনেক নামকরা বিজ্ঞান গবেষণাপত্রে তার গবেষণার আর্টিকেল প্রকাশ করেছে | অতি সম্প্রতি তার একটি নিবন্ধ বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা মেডিকেল জার্নাল “ল্যনচেটে” প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা ছাড়াও এই বিজ্ঞানী দক্ষিণ এশীয় ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় তিরিশ বা তদুর্ধ্ব দেশের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোপূর্বে ২০১২ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ২০১৪ সালে ভারতের দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া মেডিকেল ইনসটিটিউটে ও সফদরজং হাসপাতালে দক্ষিণ এশীয় ১২টি দেশের বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি লক্ষ্য করলেন সেখানে বাংলাদেশের কোন বিজ্ঞানী নেই। তিনি ব্যাপারটি নিয়ে ডব্লিউ এইচ ও, জেনেভার সাথে কথা বলে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি প্রকল্প পাশ করেন। ডব্লিউ এইচ ও প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ২০১৮ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা যান। সেখানে তিনি আই ই ডি সি আর এর পরিচালক ড. বে-নজীর আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তৎপরবর্তী ঢাকা মেডিকেল কলেজের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালের জীবানুবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও গবেষকদের নিয়ে আলোচনা করেন ও বাংলাদেশকে এই গ্লোবাল প্রোগ্রামের অংশ করার জন্য ডব্লিউ এইচ ও জেনেভাকে অবহিত করেন। যা এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে। অতিসম্প্রতি তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরেকটি প্রকল্প EGASP কর্মসূচি নিয়ে করোনা মহামারীর কারণে তার নির্ধারিত সফর স্থগিত করে বিগত ১১ই আগস্ট একটি অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে পাপুয়া নিউগিনিসহ অন্যান্য নির্ধারিত দেশসমূহে অনলাইন ট্রেনিং সমাপ্ত করে কার্যক্রম শুরু করবেন।
এই প্রথিতোযশা বিজ্ঞানী হলেন ড. রতন কুন্ডু। বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি প্রশান্তপাড়ের বাঙালীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণেও তিনি সমান অবদান রেখে যাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি, সিডনী প্রেস এন্ড মিডিয়া কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সহ সহাপতি ও সংবিধান প্রণেতা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, সিডনী অস্ট্রেলিয়ার উপদেষ্টা, মাতৃভাষা সংরক্ষণ আন্দোলনের প্রাক্তণ পরিচালক, সিডনি ভিত্তিক সেন্টার ফর পূজা এন্ড কালচার (CPCL) এর প্রাক্তণ চেয়ারপারসন। এ ছাড়াও তিনি একজন বিদগ্ধ লেখক ও কলামিস্ট। বাংলাদেশ স্বাধীনতাযুদ্ধের পটভূমিতে লিখিত তার একটি উপন্যাস “মীরামংগল” প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ সালে। বাংলা একাডেমীর বইমেলায় এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট জনাব শাহরিয়ার কবীর।
প্রশান্তপাড়ে বাঙালীর প্রাণের মেলা, টেম্পিপার্ক বৈশাখী মেলার” রূপকারদের মধ্যে তিনি একজন। বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনি, অস্টেলিয়া আয়োজিত ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতিবছর এই মেলায় বাঙালী কৃষ্টি সংস্কৃতির লালন ও প্রচার করা হয়। তিনি সৃষ্টি লগ্ন থেকেই এই মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করে আসছেন। মেলার সুভেনিরটিও তারই তত্ত্বাবধানে ও সম্পাদনায় এ যাবৎ প্রকাশিত হচ্ছে। এভাবেই তিনি বাঙালী সংস্কৃতি চর্চার যুগ যুগ ধরে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন। একজন লেখক ও কলামিস্ট হিসেবে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রচারিত প্রথম পত্রিকা স্বদেশ বার্তা, বাংলা বার্তা, বাংলা কথা, স্বাধীন কণ্ঠসহ অনেক অনলাইন পত্রিকা যেমন বাংলা-সিডনি.কম, বিদেশবাংলা24.কম, সিডনিপ্রতিদিন.কম এ নিয়মিত নিবন্ধ প্রকাশ করছেন। এ ছাড়াও ডিবিসি, সময়টিভি, এসএ টিভি, জয়যাত্রা টিভিতেও অনেক ভিডিও সংবাদ প্রচার করেছেন। একজন বিজ্ঞানী, লেখক ও সমাজকর্মী হিসেবে অনেক টিভি চ্যানেলে অসংখ্যবার সাক্ষাৎকার ও লাইভে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিস্তারে অন্যান্য সহযোগী ও সমমনা সংগঠন নিয়ে অনেকবার সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। বাংলাদেশ হাই কমিশন ক্যানবেরা, বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করে দেশমাতৃকার কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থেকেছেন।
ড. রতন কুন্ডুর পৈত্রিক নিবাস বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার এক প্রত্যন্ত জনপদ ধামুরা গ্রামে। গ্রামের স্কুলের পড়াশুনা করেছেন। শিক্ষার প্রতি অদম্য ইচ্ছা ও মেধা তাকে বারবার পুরস্কৃত করেছে। পঞ্চম শ্রেণিতে জুনিয়র বৃত্তি লাভ তার বৃত্তি জীবনের হাতে খরি। অস্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আত্মগোপনে থাকার কারণে যে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তাকে অটো প্রোমেশন দিয়ে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়। যাই হোক, এস. এস. সি. পরীক্ষায় তিনি স্কুলের ইতিহাসে ৪টি বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে ও সমগ্র সেন্টারে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এস. এস. সি.তে বৃত্তি, এইচ. এস. সি.তে বৃত্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি নিয়ে তিনি পড়াশুনা করেন। প্রসংগত উল্লেখ্য তার বাবা প্রয়াত: রমেশ চন্দ্র কুন্ডু ছিলেন চিররুগ্ন এবং একটি নিম্ন বিত্ত পরিবারের সদস্য। ছয়টি মেয়ের ভরণ পোষণ, বিবাহ দিতে তাকে সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এর উপর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বসতবাড়ি দুবার লুটতরাজ হয়। বন্দরের দুটো ঘরই পাক সেনা ও তার দোসর রাজাকারেরা পুড়িয়ে দিলে তিনি সর্বশান্ত হয়ে যান। বৃত্তি না পেলে পরিবারের অন্যান্য সন্তানদের মত তাকেও হয়ত পড়াশুনা বাদ দিয়ে সংসারের ঘানি টানাতে হতো |
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও মাস্টার্স প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েও সম্প্রদায়গত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এর পর পঞ্চম বিসিএস এ নির্বাচিত হয়ে সরকারি চাকুরীতে যোগদান করেন। এখানেও তিনি বৈষম্যের শিকার হন। এতো ভালো রেজাল্ট করা সত্ত্বেও তার ছাত্র রাজনীতির কারণে তাকে প্রথমেই পানিশমেন্ট পোস্টিং এর শিকার হতে হয়। বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ- মনপুরাতে তাকে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। ছাত্র জীবনে তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। অনুষদের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে তিনি ছাত্রলীগের প্যানেলে নির্বাচন করে সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এ কারণে তাকে অনেকবার এ্যারেস্ট করা হয়েছিল। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছিল। ১৯8৯ সালে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের এডিনবরাতে আরেকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের সুযোগ পান। সেখানেও তিনি তার প্রতিভার স্বাক্ষর রখেতে সক্ষম হন। তিনি হাই ডিসটিংসন সহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বাঙালীদের মধ্যে প্রথম রেকর্ড সৃষ্টি করেন। যার ফলশ্রুতিতে ব্রিটেনের সবচেয়ে নাম করা টেলিভিশন বিবিসি তার একটি তিন মিনিটের সাক্ষাৎকার প্রচার করলে যুক্তরাজ্যের বাঙালী কমিউনটির মধ্যে তা ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। এখানেই শেষ নয় তার অভূতপূর্ব ফলাফলের কারণে তাকে ডিউক অব এডিনবরা, কিং ফিলিপ তার হিলসাইড টেরাসের বাগানবাড়ি গার্ডেন পাটিতে তাকে আমন্ত্রণ জানান। এভাবেই তিনি দেশের জন্য বিশাল সম্মান বযে এনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেন। এই সুবাদে তিনি বিট্রেনের রানী এলিজাবেথ এর বরাবরে বাংলাদেশে কমনওয়েলথ বৃত্তি চালু রাখার আবেদন জানালে তা গৃহীত হয় ও সরকারি সিদ্ধান্ত একটি রাজকীয় এম্ব্রোস করা খামে রানী এলিজাবেথ এর স্বাক্ষরসহ তাকে প্রদান করা হয় এবং ব্যক্তিগত ভাবে তাকেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর পরে ডক্টরেট করার জন্য কমনওয়েলথ কমিশন এ বৃত্তি মজুর করেন। তিনি বৃত্তি প্রাপ্ত হয়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোরডান রিসার্স ইনসটিটিউটে ভাইরোলজির উপর গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঐ সময় তার মা দেশে খুব অসুস্থ হয়ে পরেন। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার তার ডেপুটেশন বাতিল করে জানান যে সরকারি বিধি অনুযায়ী ডেপুটেশনের মেয়াদ বৃদ্ধি সম্ভব নয়। তাই তাকে গবেষণা স্থগিত রেখে দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অবস্থায়ই একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা “ওয়াল্ড ইউনির্ভাসিটি সার্ভিসেস” এর জাতীয় কর্মচারী পরিষদের অ্যাসোসিয়েট সেক্রেটারি পদে পর পর দুবার নির্বাচিত হন। এরপর তিনি কাউন্সিলর হিসেবে দক্ষিণ শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত এসিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
যাইহোক, ১৯৯০ সালে তিনি আবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেসন্স এর বৃত্তি নিয়ে তিনি ভারতের হরিযানা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্রুন বায়োটেকনোলজীতে হাই ডিস্টিংকশন সহ ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে সরকারি চাকুরীতে যোগ দিলে আবার তিনি নিবর্তনের শিকার হন। তার নামে এয়ার মার্ক করা কোয়াটার তাকে না দিয়ে অন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এর প্রতিকার চাইলে তাঁকে সিলেট এল টি আই এ বদলী করা হয়। সামাজিক এবং চাকুরীতে এই নির্যাতনের কারণে যে মেধার পূর্ণ বিকাশের জন্য কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্কিল মাইগ্রেসনের জন্য দরখাস্ত করেন। দুই দেশই তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি অস্ট্রেলিয়া আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ও ২০০০ সালে তিনি সপরিবারে এখানে চলে আসেন। এখানে আসার পরেই মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরী করার সুযোগ লাভ করেন। তার ক্যারিয়ারের আরেকটি দিক হল শিল্প ও সংস্কৃতি। ঢাকাতে চাকুরীর সুবাদে তিনি সেখানকার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সাথে জড়িয়ে পরেন। ছেলেবেলা থেকেই মঞ্চনাটকে অংশ গ্রহণ করতেন তিনি। ১৯৯২-৯৩ সালে থিয়েটার স্কুলের ৫ম ব্যাচে প্রশিক্ষণ লাভ করে ঢাকার নামকরা নাট্যগোষ্ঠী- নাগরিক নাট্যাঙ্গনে যোগ দেন ও অনেক মঞ্চ নাটকে কুশীলব হিসেবে কাজ করেন |
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী পরিবার নিয়ে, সিডনীর অদূরে গ্রানভিল শহরে বসবাস করেন। এক মেয়ে ও এক ছেলে তাদের সংসারে। ছেলে মেয়েরাও স্ব মহিমায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনেক সদালাপী ও অমিত ধী শক্তির অধিকারী। দেশের মানুষের দুঃখে তিনি কষ্ট পান, ব্যথিত হন। আর সে কারণেই তিনি অদ্যাবধি নিজের একক প্রচেষ্টায় আটটি চ্যারিটি কার্যক্রম পরিচালন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইন্দোনেশীয়ায় সুনামি ভিকটিমদের জন্য অর্থ সংগ্রহ, বাংলাদেশে সিডর এ ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য প্রদান, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সহায়তা, নিগ্রহের শিকার পূর্ণিমা ও নিহত বিশ্বজিৎ-এর পরিবারকে সাহায্য প্রদান, বন্ধু ও সহপাঠী ৪ জনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ও বিয়োগজনিত কারণে অর্থ সংগ্রহ করে অনুদান প্রদান। অতি সম্প্রতি তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, অস্ট্রেলিয়ার ব্যানারে বাংলাদেশে বন্যা ও করোনা ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সাহায্যের জন্য ৫ লক্ষ টাকা অনুদানের টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সংগৃহীত সমুদয় অর্থ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হবে। এই মহান মানুষটি একটি দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
(এই নিবন্ধটি ড. রতন কুন্ডু, তার পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের সাক্ষাতকার এর মাধ্যমে সংকলিত)
আনন্দবাজার/শাহী