ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাটের কালাইয়ে উচ্চফলনশীল চিচিংগা চাষ

ধান চাষের অনুপযোগী এবং বন্যার পানি থেকে মুক্ত উচু জমিতে চিচিংগা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুন-গ্রামের কৃষকেরা। চিচিংগার বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে এখন হাসি ফুটছে।

এই চিচিংগা উচ্চফলনশীল, কম খরচ ও স্বল্প সময়ে অধীক লাভ জনক ফসল হওয়ায় চিচিংগার চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি হয়েছে ঐ গ্রামের কৃষকেরা। অনেক পরিবারে ফিরিয়ে এসেছে সুখ ও স্বচ্ছতা। চলতি বছর এই গ্রামের আশেপাশে প্রায় ৩৩ থেকে ৩৫ বিঘা উচু জমিতে চিচিংগা চাষ হয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার বেগুন-গ্রামের কৃষক মো.রেজাউল ইসলাম, খলিল উদ্দিন, আব্দুল নূর, ইমদাদুল হক, ইসমাইল হোসেন, জালাল মিয়া, মোসলেম উদ্দিন ও আবু তাহেরসহ অনেকেই পালোইগাড়ি মাঠে চিচিংগার চাষ করেছেন। সেই গ্রামের কৃষকেরা গত কয়েক বছর ধরে অপ্রচলিত সবজি জাতীয় ফসল চিচিংগা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বর্তমান তাদের রোপন কৃত চিচিংগাগুলো মাচাই মাচাই ঝুলছে। বেশী লাভের আশায় ধান, আলু চাষের পরিবর্তে উচু জমিতে অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসলের পাশাপশি অপ্রচলিত চিচিংগা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সবজি ক্রেতাদের কাছে চাহিদা থাকায় জমি থেকে বিক্রি হওয়ার ফলে চাষীদের পরিবহন-খরচ ও সময় দু‘টোয় সাশ্রয় হচ্ছে তাদের। চিচিংগাগুলো জেলা-উপজেলার বিভিন্ন পাইকারেরা জমি থেকে কিনে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন।

উপজেলার বেগুন-গ্রামের চিচিংগা চাষী মো.রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরে এই সময়ে যে জমিতে ধান চাষ তেমন হয়না ও বন্যার পানিতে ডোবেনা সেইসব উচু জমিতে চিচিংগা চাষ করা হয়। এবার ৪৫ শতক জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের চিচিংগা চাষ করেছি। এই ৪৫ শতক জমিতে চিচিংগা চাষের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে সেই জমি থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা চিচিংগা বিক্রি করেছি। আগামী প্রায় ৪ সপ্তাহ ঐ চিচিংগা বিক্রি হবে। বর্তমান পাইকারী বাজারে চিচিংগা দাম অনেক ভাল। আশা করছি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে।

একই গ্রামের ইমদাদুল হক বলেন, গত বছরে ১০ শতক নিজ জমিতে চিচিংগা চাষ করে ছিলাম। সেই জমিতে চিচিংগা চাষ করতে সেচ, সার, বীজ ও চাষ বাবদ প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সেই জমি থেকে উৎপাদিত চিচিংগা প্রায় ২২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। চলতি বছরে ২০ শতক জমিতে চিচিংগা চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে এবং বর্তমান বাজারে চিচিংগা দামও ভালো পাচ্ছি।

উপজেলার বেগুন-গ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ী মো.আমিনুর ও রফিকুল ইসলাম বলেন, এই এলাকর উৎপাদিত চিচিংগাগুলো গুনগত মান খুব ভাল। তাই এই চিচিংগাগুলো ঢাকা-মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনেক বেশি । চাষীদের জমি থেকে প্রতি মণ চিচিংগা ১,৩০০ থেকে ১,৪০০ টাকায় কিনা হচ্ছে।

চিচিংগার গুনাগুন বিষয় নিয়ে কালাই উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু তাহের মো.তানভীর হোসেন বলেন, চিচিংগা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। চিচিংগা খেলে শরীরের যেকোনো ধরনের ক্ষত দ্রæত শুকিয়ে যায়। এতে প্রচুর পরিমান আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এই সবজিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে। তাই শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়। চিচিংগা দেহের পানি-শূন্যতা রোধ করতে পারে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। জ্বরের সময় চিচিংগা খেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে। চিচিংগা ডায়াবেটিস ও জন্ডিসের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। এই সবজিতে ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। তাই চিচিংগা একটি ভালো সবজি।

কালাই উপজেলার কৃষি অফিসার মোছা.নীলিমা জাহান বলেন, এই বছরে চিচিংগার চাষ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে। চিচিংগা চাষ ছাড়াও বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি চাষ হয়েছে। এই চিচিংগা চাষের জন্য কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহের পরামর্শ ও বালাইনাশক ব্যবহার না করা জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চিচিংগা চাষ করে এলাকার অনেক পরিবার ফিরিয়ে এসেছে স্বচ্ছতা। বর্তমান বাজারে চিচিংগা চাহিদা ভালো থাকায় আগামীতে এই ফসল চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন