নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ইয়াবা বিক্রি করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অস্ত্র কিনছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে কৌশলে ক্যাম্পে আগ্নেয়াস্ত্র আনার অভিযোগ মিলছে তাদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার পথে বিদেশি পিস্তলসহ চট্টগ্রাম ও কুতুপালং ক্যাম্প থেকে দুইজনকে আটকের পুলিশ। পর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।
প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করছে ৩২টি সন্ত্রাসী গ্রুপ ও উপ-গ্রুপ। ক্যাম্পগুলোতে ইয়াবার বিনিময়ে অস্ত্র সংগ্রহ করা রোহিঙ্গা নেতাদের বলা হয় মাস্টার। পুলিশ বলছে, ক্যাম্পে এমন মাস্টারের সংখ্যা কয়েকশ’।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে পিস্তলসহ আটক করা হয় টেকনাফের আব্দুর রাজ্জাককে। ঢাকা থেকে ইয়াবার বিনিময়ে পিস্তলটি কুতুপালং ক্যাম্পের মাস্টার কামালের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিলো তার।
সিএমপি’র উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, এখন ঢাকা থেকে অস্ত্র আনছেন তারা এবং বিনিময়ে তারা ইয়াবা পাঠাচ্ছেন ঢাকায়। ওখানে পৌঁছে দেয়ার কথা একজন নেতার কাছে, তাকে আমরা আটক করি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রের প্রধান উৎস মিয়ানমার ও ভারত। এছাড়া গহীন পাহাড়ে গড়ে তোলা অস্ত্র তৈরির কারখানা থেকেও সংগ্রহ করা হচ্ছে অস্ত্র। সম্প্রতি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে আটজন নিহতের পর ক্যাম্পে অস্ত্রের উৎস নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক মিশন প্রধান (মিয়ানমার) মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, আরাকান আর্মি যে অভিযান চালাচ্ছে সেখানে বিপুল পরিমান অস্ত্র তাদের হাতে। অ্যান্টি অ্যাকগ্রাপ গান থেকে শুরু করে এমন কোনো অস্ত্র নেই যা তাদের কাছে যাচ্ছে না।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত ৯ মাসে প্রায় শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে দমনে প্রতিটি ক্যাম্পে একটি করে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করার কথা জানান ডিআইজি।
ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসা, মানবপাচার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৬ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০০ মামলায় আসামি ৫০০; ২০১৯ সালে ২৬৩ মামলায় আসামি ৬৪৯; ২০১৮ সালে ২০৮ মামলায় আসামি ৪১৪; ২০১৭ সালে মামলা হয়েছে ৭৬টি।
আনন্দবাজার/শহক