ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে আমন চাষীদের স্বপ্নে ইঁদুরের হানা

শরৎকাল শেষ। কার্তিক মাসেরও শেষ সময় চলে এসেছে। ঠিক এর মধ্যেই গাজীপুর জেলায় আমন চাষীদের স্বপ্নের আমন ধান ক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের তান্ডবলীলা দেখা গিয়েছে। ধান ক্ষেতের ধানের থোর এবং সবুজ কাঁচাধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ইঁদুর। এদিকে আমন ধান পরিপক্ক হওয়ার এই মাঝামাঝি সময়ে এভাবে ইঁদুর দ্বারা ধানক্ষেতে প্রতিনিয়ত আক্রমণে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় আছেন এ জেলার কৃষকরা।

এদিকে মাসের এ সময়ে মাঠ জুড়ে দোলখায় সবুজ ধান গাছের উপর সোনালী ধানের হাসি। যা দেখে স্বপ্নবাজ কৃষক তার পরিশ্রমের কথা ভূলে যায়। চারদিক থেকে নাকে এসে লাগে সোনালী ধানের মৌ-মৌ গন্ধ। আর এই দৃশ্য দেখেই রঙিন হয়ে ওঠেছে কৃষকের চোখ-মুখ। তাই সোনালী ধানের সোনার স্বপ্ন দেখছে জেলার প্রান্তিক কৃষকরা। তার মধ্যেই প্রান্তিক কৃষকের ফলিত সোনার স্বপ্নের ধান কেটে, খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে ইঁদুরের দল। গাজীপুরে এবার আমন রোপন শুরুর পূর্ব থেকে অতি বৃষ্টি হচ্ছে। ভাওয়াল অঞ্চল অধ্যুষিত গাজীপুর জেলার উঁচু-নীচু জমিতে বেশি বৃষ্টি পেয়ে মহা খুশি হয়েছিলেন এখানকার কৃষকরা।
কিন্তু মাঝামাঝি সময়ে এসে আমন ক্ষেতে গোড়া পচন রোগে, পোকা ও ইঁদুরের সমন্বিত আক্রমণ দেখা দেওয়ার ফলে জেলার কৃষকের লালন করা সেই সোনার স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন হতে বসেছে। ধান ক্ষেতে একাধিক কীটনাশক প্রয়োগ করে কিছুটা রক্ষা করতে পারলেও, ইঁদুরকে কোন ভাবেই দমন করতে পারছেন না তারা। এতে করে কৃষকদের মাঝে আমন ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।

এদিকে গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২৭২৫ হেক্টর। আর রোপা আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১৭৭৬৬ মে.টন। গাজীপুরে এবার হাইব্রিড, উফশী এবং স্থানীয় জাতের ধানসহ বিভিন্ন রকমের ধানের আবাদ করা হয়েছে। এদিকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাইব্রিডের হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে চার (৪) মে.টন, উফশী জাতের হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ২.৮৬ মে.টন আর স্থানীয় জাতের হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১.৫০ মে.টন।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদদের ভাষ্যমতে, এই সমস্যার একমাত্র সমাধান ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। দমন ব্যবস্থাপনা সাধারণত দুই ধরণের (১) পরিবেশ সম্মতভাবে দমন ও (২) বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে দমন বা রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন।

এক প্রশ্নের জবাবে এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন-কৃষকের উপকার করে তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এমন পরভোজী প্রাণী গুলোকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আর এই প্রাণীগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ইঁদুর সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবেশ থেকে দিন দিন এইসব প্রানীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এদের রক্ষায় আমাদের সকলের সজাগ দৃষ্টি থাকা উচিত।

জেলার কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের কৃষক ওয়াজ উদ্দিন জানান, চার (৪) বিঘা জমিতে এবার রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন তিনি। সময় মতো বৃষ্টি এবং অনুকূল আবহাওয়া হওয়ায় এবার আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু সেই ফলনে হানা দিয়েছে ইঁদুর।

এদিকে উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের চর সনমানিয়া গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, তিনি এবার রোপা আমন মৌসুমে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। শেষ সময়ে এসে ধান ক্ষেতের অবস্থা ভালোই ছিলো। কিন্তু ইঁদুর ধান কেটে ফেলছে। উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে রাতে ইঁদুর মারার জন্য বিষটোপ ব্যবহার করছি এবং ইঁদুর মারার যন্ত্র ব্যবহার করেও আশানুরুপ কোন ফলাফল পাচ্ছি না। বিশেষ করে কোন ভাবেই ইঁদুর দমন করা যাচ্ছেনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মাহবুবুল আলম বলেন, ফসলের ক্ষতি ঠেকাতে ইঁদুর দমনে আমরা সারা বছরই অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু এই বছর করোনার কারণে আমরা সেই ভাবে করতে পারছি না। তবে জেলার অধিন্যস্ত সকল উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন সব সময়ই কৃষকের তদারকি করে।

তিনি আরো বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৮ সালে ইঁদুর নিধণে সংখ্যার ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে ১ম পুরস্কার অর্জন করে গাজীপুর জেলা। ইঁদুর নিধন কার্যক্রম সব সময়ই অব্যাহত থাকবে কৃষক এবং কৃষিকে বাঁচাতে হলে। কারণ ইঁদুর কৃষকের জাতীয় শত্রু। আর এই শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্য আমরা সব সময়ই কৃষকের পাশে আছি সর্বদা সহযোগিতা নিয়ে।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন