ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্তরায়

আজ থেকে প্রায় ৫৬ বছর আগের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জাপান নবজন্ম লাভ করে সেবছরই। সে বছর নীল-সাদা রঙের নতুন রঙের এক ট্রেনের সাথে পরিচয় করা পৃথিবীকে। জাপানিরা তার নাম দিয়েছিলো ‘শিনকানসেন’। বর্তমানে আমরা যাকে ‘বুলেট ট্রেন’ বলে থাকি।

বিগত ৫৬ বছরে দেশটি এই বিশেষ ধরনের ট্রেনের যথোপযুক্ত উন্নতিসাধন করেছেন। গতি, সেবা, সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তাসহ সকল ক্ষেত্রেই বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হয় ট্রেনটির। এমনকি জাপানকে অনুসরণ করে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশ তাদের যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য এই বিশেষ ট্রেনের যোগাযোগব্যবস্থা চালু করেছেন, এমনি বাংলাদেশও দ্রুতগতির এই ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

বিগত ৫৬ বছরে এই ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পেয়ে সর্বশেষ বুলেট ট্রেনটি ঘন্টায় ৪০০ কিলোমিটার গতিবেগে চলে। বিষয়টা এমন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকায় যদি বিশেষ কোনো বুলেট ট্রেন চালু করা হয়, তবে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগবে সর্বসাকুল্যে ১৫ মিনিট! ভাবা যায়!

সে যাই হোক, যে কারণে এই ট্রেনের বিবরণ দেয়া, কারণটি বলছি এখন। ভূমিকম্প ও সুনামির মতো দুর্যোগগুলোর প্রায়শই লণ্ডভণ্ড হওয়া জাপানে গত ৫৬ বছরে শিনকানসেন নেটওয়ার্কে একজন যাত্রীও নিহত বা আহত হননি!

যেখানে বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নামক একটি সংগঠনের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে শুধু সড়ক দুর্ঘটনাই ঘটেছে ৪ হাজার ৭০২টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫ হাজার ২২৭ জন। আহত ৬ হাজার ৯৫৩ জন। জাপানের সাথে বাংলাদেশ কিংবা বুলেট ট্রেনের সাথে আমাদের সড়কপথের তুলনা করাটা সমীচীন না হলেও জন্মগতভাবে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা সকল নাগরিকদের অধিকার।

পৃথিবীর একটি দেশে যখন একটি পরিবহন ব্যবস্থায় ৫৬ বছরেও প্রাণহানি ঘটেনা, অন্য একটি দেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় বলি হয় কয়েক হাজার প্রাণ, কয়েক হাজার পরিবার। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে হাজারো পরিবার হারায় তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। দারিদ্র্যের কালো থাবা গ্রাস করে পরিবারটিকে। সড়ক দুর্ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এর ফলে হঠাৎ করে বিপর্যয় নেমে আসে একটি পরিবারে।

প্রত্যেক মানুষ শান্তি চায়। শান্তি ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লাগামাহীন সড়ক দুর্ঘটনায়ও একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। দেশে শান্তি ও সহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠায় দেশের সকলে সম্মিলিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনার মতো প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কাজ করতে হবে।

প্রতিবছর হাজার মায়ের বুক খালি করে দেশে পূর্ণাঙ্গ শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। আমরাই দায়ী এই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য, সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরই। একা হলে হারি, এক হলে পারি। সকলে এক হলে, সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই প্রতিবন্ধকতা দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

পৃথিবী শান্তির হোক। পৃথিবী সম্প্রীতির হোক।

লেখক: হোজাইমা সারোয়ার, শিক্ষার্থী,
স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন