ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুবিতে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্তে গড়িমসি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে এবছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। অভিযোগ তদন্তে তিন সপ্তাহ মেয়াদের তদন্ত কমিটি হলেও ৩৭ সপ্তাহেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি সেই কমিটি।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী রেজওয়ান তালুকদার একই বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের ৮ম ব্যাচের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছেন এই মর্মে গত ১৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের প্রোগ্রাম পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নানাভাবে অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন। বিভিন্ন সময় বিভাগের নিজস্ব রুমে ও বাসায় যাওয়ার জন্য বলেছেন ওই শিক্ষক। এছাড়া অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হলে শিক্ষার্থীকে সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে ভাবতে হবে না। অভিযোগে ওই ছাত্রী আরো উল্লেখ করেন, আলী রেজওয়ান তালুকদার পরীক্ষার হল থেকে তার মোবাইল নিয়ে হয়রানিরমূলক আচরণের সকল প্রমাণ মুছে দেন।

তবে এ নিয়ে ১৯ জানুয়ারি কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষক আলী রেজওয়ান। সম্মেলনে এ শিক্ষক অভিযোগকারী ছাত্রীকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেন। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে ওই শিক্ষক আভিযোগকারীকে নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলেও অভিযোগ আছে। এর প্রেক্ষিতে ২০ জানুয়ারি সান্ধ্যকোর্সের সকল কার্যক্রম থেকে আলী রেজওয়ানকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পাশাপাশি অভিযোগ তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলকে। ৩ সপ্তাহের ভেতর তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও কমিটি গঠনের ৩৭ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা।

এরপর গত ২১ জানুয়ারি অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রার বরাবর মানহানীর লিখিত অভিযোগ দেন ঐ বিভাগেরই শিক্ষক ড. মো: হাবিবুর রহমান ও আকবর হোসেন। এসব ঘটনায় বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা তাঁর প্রতি অনাস্থা জানালে তিনি বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি চান। এরপর গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ঐ পদ থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমি ঘটনার পর থেকে বারবার রেজিস্ট্রার এবং তদন্ত কমিটিকে নক করেছি। ধীরগতি দেখে পুনরায় লিখিতও দিয়েছি। কিন্তু কেন যে বিচার হচ্ছে না বা তদন্ত হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, যৌন নিপীড়নের এই ঘটনাতে প্রশাসন স্পষ্টভাবে গড়িমসি করছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও এমন ঘটনায় বিচার না হওয়ায় একদিকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে নিপীড়করা সাহস পেয়ে যাচ্ছে।

তদন্তের দায়িত্বে থাকা যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের আহ্বায়ক কামরুন নাহার বলেন, ‘তদন্তের জন্য আসলে ৩ সপ্তাহ যথেষ্ট নয়। আমরা বেশ কয়েকবার বসেছি। কিছুটা অগ্রগতিও হয়েছে। এরপর আমি শিক্ষা ছুটিতে চলে যাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ঘটনার তদন্তভার ছিল যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের উপর। কিন্তু সেলের আহবায়ক শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে দেরি হচ্ছে। আমরা উপাচার্যের নির্দেশ পেলে সেলের নতুন আহবায়ক নিয়োগ দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করবো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। কিন্তু প্রতিবেদন না পেলে আমরা বিচার কিভাবে করবো? দেখি বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।’

আনন্দবাজার/শাহী/মোহাইমিন

সংবাদটি শেয়ার করুন