ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেকারত্ব ঘোচাতে কর্মমুখী শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে 

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় থমকে গেছে পুরো পৃথিবী। জনজীবনে নেমে এসেছে অন্ধকারের ছায়া।ছোট বড় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানেরই কম বেশি লোকসানের সাথে দেখা হয়েছে হইতো কারো একটু বেশি বা কম। এমন পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান চিরতরে বন্ধও হয়ে গেছে লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে। আবার অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানে চলছে কর্মী ছাটায়ের মেলা। কারণে অকারণে শতশত কর্মী ছাটাই চলছে। এমতাবস্থায় নেই নতুন কোন চাকরির নিয়োগ বা কোন পরীক্ষা। যেকারণে দিনদিন বেড়েই চলেছে বেকারত্বের হার। তাই বর্তমান সময়ে এই বেকারত্বের হার কমিয়ে আনতে এবং আগামী দিনের কথা চিন্তা করে প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা।

আমাদের সবার কাছে একটা পরিচিত শব্দ হলো শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। অবশ্যই শিক্ষা ছাড়া জীবন অপূর্ণ। কিন্তু যে শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগে না, অবশ্যই সেই শিক্ষা অর্থহীন।কেননা এই ধরনের শিক্ষা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি বোঝা হিসেবে মনে করে। আর তাই বলা যায় জীবন ভিত্তিক শিক্ষায় প্রকৃত শিক্ষা। অর্থাৎ জীবনের সাথে সম্পৃক্ত যে শিক্ষা সেটাই কর্মমুখী শিক্ষা। এবং এই কর্মমুখী শিক্ষায় হচ্ছে আমাদের বাস্তব জীবনের সহায়ক।

কর্মমুখী শিক্ষা হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে তার আত্নপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার লক্ষ্যে বিশেষ কোন কর্মে প্রশিক্ষিত করে তোলা। অর্থাৎ যে শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষ কোন একটি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে এবং শিক্ষা শেষে জীবিকার্জনের যোগ্যতা অর্জন করে, তাকেই কর্মমুখী শিক্ষা বলে। কর্মমুখী শিক্ষাটা আসলে কোন যান্ত্রিক শিক্ষা নয়। জীবনমুখী শিক্ষার পরিমন্ডলেই এর অবস্থান। তাই পরিপূর্ণ ও সামগ্রিক জীবন বোধের আলোকে কর্মমুখী শিক্ষা দুইভাগে বিভক্ত। যারা বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শী তারা তাদের যোগ্যতা অনুয়ায়ী পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে যোগদান করার সুযোগ থাকে। আরেকটি হচ্ছে সাধারণ কর্মমুখী শিক্ষা যে শিক্ষা অর্জনে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে না উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় কামার, কুমোর, কলকারখানার কারিগর, মিস্ত্রি, দর্জি, গ্রাফিক্স আর্ট ইত্যাদি। যার জন্য প্রয়োজন পড়ে না বিশেষ কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যেখানে বেকারত্বের কোন সুযোগ নেই।

মানুষের মেধা ও মননকে। বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন শিক্ষার। তাই মানুষকে সেই শিক্ষায় গ্রহণ করা উচিৎ। যে শিক্ষা তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীননধারার উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের অশিক্ষা ও অপরিকল্পিত পুথিগত শিক্ষাব্যবস্থার কারণে প্রায় দেড় কোটি লোক কর্মহীন। এ দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে জীবন সম্পৃক্ত ও উপার্জনক্ষম কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন জরুরি। কর্মমুখী শিক্ষা আত্নকর্মসংস্থানের নানা সুযোগ সৃষ্টি করে। ব্যক্তিকে আরো স্বাবলম্বী করে তোলে এবং ব্যক্তি ও দেশকে বেকারত্বের হাত থেকে মুক্তি দেয়। শুধু তাই নয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিকে আমরা বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারি। বর্তমান বিশ্বের, সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে শিল্প, বিজ্ঞান, কারিগরি উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধনের উপযোগী করে তোলা অনিবার্যভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই আমরা যে, কর্মুমুখী শিক্ষার গুরুত্ব আজ সর্বত্র স্বীকৃত। এর মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা পেশাগত কাজের যোগ্যতা অর্জন করে এবং দক্ষ কর্মী হিসাবে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ও উৎকর্ষ সাধনবিনা কোন জাতির কারিগরি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সম্ভব না। বাংলাদেশে কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশে একের পর এক প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল, পলিটেকনিক, গ্রাফিক্স ইত্যাদি। যা দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। তাই আমাদের দেশের সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় আরো অনেক বেশি কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।

একটা কথা আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার দেশ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এ জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রুপান্তর করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে দক্ষ জনশক্তি দেশের সম্পদ, উন্নয়নের চাবি কাটি। আর তাই আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমেই দেশের বিপুল পরিমান বেকারত্বের মোচন ঘটনা সম্ভব এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম।

লেখক: ইমরান হুসাইন
সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ তরুণ কলাম
লেখক ফোরাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা

আনন্দবাজার/শাহী/ইমরান

সংবাদটি শেয়ার করুন