ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্লাস্টিকের দাপটে বাঁশ শিল্পের পণ্য হুমকির মুখে

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় প্লাস্টিকের দাপটে বাঁশ শিল্পের পণ্য হুমকির মুখে পড়েছে। অদূর অতীতে এ উপজেলায় প্রায় সব মানুষই বাঁশ দিয়ে তৈরি বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করতো। আর এটা সম্পূর্ণরূপে যোগান দিতো বাঁশ শিল্পের কারিগরেরা। তারা ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করতো।

আগে গ্রামাঞ্চলে বাঁশ শিল্পের জৌলুস থাকলেও এখন রাজত্ব করছে সস্তা প্লাস্টিকজাত পণ্য। এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙ্গারী, টুকরী, চালনি, মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি, পাখা, খৈচালন, ঢাকি, ও মুরগীর খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরির কাজ চলতো এবং পরিবারের নারী-পুরুষ যৌথভাবে এসব কাজ করত। উৎপাদিত বাঁশ ও রশি পণ্য সাপ্তাহিক হাঁটের দিনে ক্রয় করে বাড়িতে তৈরি করে স্থানীয় উপজেলার বাজরে বিক্রির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী উপজেলায় নিয়ে যেত কারিগর ও পাইকাররা।

এছাড়াও বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য বিকিকিনি হতো। চাহিদা কমে যাওয়ায় বাঁশ শিল্পের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ বাঁশ শিল্পের কারিগররা অথবা পেশা পরিবর্তন করছে তারা। এ উপজেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশের প্রাচুর্য্য রয়েছে এবং এখনও অনেকে বাঁশের আবাদও হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা জানান, পুঁজির অভাব, শ্রমিকের দুষ্প্রাপ্যতা, বাড়তি মজুরী, প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এ সবের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এ শিল্পের অনেক কারিগর ও মালিকেরা।

গত ১৪ অক্টোবর বুধবার উপজেলার পৌর শহরের পূর্ব দাসপাড়ার লক্ষী রাণী ও দেবেন, নেকমরদ বামনবাড়ির মুহিত রায়, ভরনিয়া গ্রামের কমল রায় এবং অনন্তপুরের সমবারু রায় বাঁশ শিল্পের কারিগর জানান বাপ, দাদার চৌদ্দ পিঁড়ি থেকে পালাক্রমে এ পেশায় আমরা জড়িত থেকে কোন মতে জীবন নির্বাহ করতে হিমসিম খাচ্ছি। তবুও বংশের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনও লেগে আছি এপেশায় কিন্তু বাঁশের বিভিন্ন জিনিস পত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের উপর ঝুঁকছে লোকজন।

তারা আরো জানান বাঁশ শিল্পের দুর্দিন কাটিয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছেনা। শুধুমাত্র বাপ-দাদার পেশা এখনো আগলে রাখার চেষ্টা করছি। বাঁশের তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। টাকার অভাবে ঠিকমত কাজ করতে পারি না। সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যেত। নির্ভরযোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিলুপ্তির পথে বাঁশ শিল্প অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে বলে এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকে জানান।

আনন্দবাজার/শাহী/কবির

সংবাদটি শেয়ার করুন