ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে কৃষকরা বুকভরা স্বপ্ন দেখছেন আমন ধানে

এখন চলছে আমন মৌসুম। চারদিকে বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের মাঠ। বাতাসে দুলছে সবুজ ধানের গাছ। ঝুলছে ধানের ছড়া। যতো দূর চোখ যায়, কেবলই আমন ধানের ক্ষেত আর সারি সারি ধান গাছ। প্রকৃতি যেন ধান দিয়ে সেজেছে। আমন মৌসুমের এই সময়ের অপরুপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হওয়াই যায়।

এদিকে কার্তিক মাসের বাকি আর ক’টা দিন। এরই মধ্যে পাকা ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণে মন জুড়িয়ে যায়। অগ্রহায়ণ মাসে আমন কাটতে শুরু করবে কৃষক। তারা গোলায় উঠাবে সোনার ফসল, এমনই প্রত্যাশায় স্বপ্ন বুনছেন গাজীপুরের আমন ধান চাষিরা।

গাজীপুর মূলত শিল্প অধ্যুষিত জেলা হলেও, এখানকার প্রত্যেকটা উপজেলায়ই ধানের আবাদ করা হয়। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে গাজীপুরে আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা যায়।

গত (৩০ সেপ্টেম্বর) বুধবার গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও, খিরাটী ও বারিষাব গ্রাম ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে আমন ধান চাষের খোঁজ-খবর নেওয়া হয় এবং ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা শেষ মুহূর্তের যতে ব্যস্ত ও পরিচর্যা করছেন ফসলের।
এর আগে জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে রোপা আমনের জন্য বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। জমিতে বীজ বুনেছেন কৃষকেরা। চারা বড় হওয়ার পর বীজতলা থেকে সংগ্রহ করে রোপন করেন জমিতে।

রোপা আমন মূলত বৃষ্টি নির্ভর ধান। আর এ মৌসুমে বৃষ্টির উপরই নির্ভর করেই আমন চাষ করেন কৃষকেরা। যেহেতু এ বছর বন্যার পানিতে প্রচুর পলিমাটি জমেছে এবংঅনুকূল আবহাওয়া সেই সাথে আশানুরুপ বৃষ্টি হওয়ায় এবার রোপা আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। সবুজ, সতেজ ফসলের মাঠের দিকে তাকিয়ে স্বস্তি আসে জেলার কৃষকদের। এদিকে গাজীপুর জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা। আর এই আমন ধানকে ঘিরে চাষীদের বুকভরা স্বপ্ন।

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের কৃষক ইমাম উদ্দিন বলেন, এই বন্যার কারণে পলিমাটি, সঠিক সময়ে বৃষ্টি এবং অনুকূল আবহাওয়া থাকায় পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়নি। আশা করছি এ বছর আমনে বাম্পার ফলন হবে।

বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যায় কৃষকেরা স্থানীয় ধানের চেয়ে উচ্চ ফলনসিল ধানের উপরই নির্ভর করছেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মাহবুব আলম দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, স্থানীয় ধানের চেয়ে উফসি জাতের ধানের ফলন বেশি হয়। খাদ্যের চাহিদা পূরণে স্থানীয় জাতের ধানের চেয়ে উচ্চ ফলনসিল ধান ( উফসি)’র ফলন অনেক বেশি হয়। আর এই কারনেই এ জাতের ধানের উপরই কৃষকের পরিপূর্ণ আস্থা।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে গাজীপুরের ৫ উপজেলায় ৪২ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় উফশী ১০০০০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের ৫১৫ হেক্টর, হাইব্রিড জাত ০ হেক্টর। কাপাসিয়ায় উফশী ১০৩০০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ১২০০ হেক্টর, হাইব্রিড ০ হেক্টর। শ্রীপুর উপজেলায় উফশী জাত ১২৮৪০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৫৭০ হেক্টর, হাইব্রিড ১২৫ হেক্টর। কালিয়াকৈর উপজেলায় উফশী জাত ৩৫৫০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৯৫০ হেক্টর, হাইব্রিড জাত ০ হেক্টর। কালিগঞ্জ উপজেলায় উফশী জাত ২৫৫০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ১২৫ হেক্টর, হাইব্রিড জাত ০ হেক্টর।

অপরদিকে চাল উৎপাদনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সদর উপজেলায় ২৯৩৭২ মে.টন, কাপাসিয়া উপজেলায় ৩১২৫৮ মে.টন, শ্রীপুর উপজেলায় ৩৮০৭৭ মে.টন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ১১৫৭৮ মে.টন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৭৪৮১ মে.টন ।

এদিকে এবছর জেলায় মোট চাউল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১৭৭৬৬ মেট্রিক টন।

গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মাহবুব আলম জানান, চলতি মৌসুমে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রত্যাশিত ফসল উৎপাদনে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাসহ কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাঙ্খিত ফসল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন