প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেছেন, দেশেই (চামড়া পণ্যের) কাঁচামাল রয়েছে। এই কাঁচামালের সঠিক ব্যবহার করে বিদেশে রফতানির পাশাপাশি দেশের বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। দেশের বাজারেও চামড়া পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমি মনে করছি চামড়া খাতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী চামড়া খাতের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ওয়েবিনার আয়োজন করে রিসার্স এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (রেপিড) এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন।
চামড়া খাত নিয়ে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে উল্লেখ্য করে সালমান এফ রহমান বলেন, নয় বছর আগে প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন এই সেক্টরের বিষয়টি দেখভালের জন্য। আমি দায়িত্ব নিয়ে দেখি এখানে অনেক ভুল হয়ে। আমার পথ ছিলো দুটি। একটি হলো যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনের যাওয়া। আরেকটি হলো সবাইকে নিয়ে নতুন করে সামনে যাওয়া। আমি দ্বিতীয়টি করেছি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে চেষ্টা করেছি। এ খাতের এই অবস্থার জন্য জনগণ, সিভিল সোসাইটি এবং সরকারসহ সবাই দায়ী।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে বিষয়টি যখন উচ্চ আদালতে পৌঁছায়। আদালতের নির্দেশনা ছিল ট্যানারিগুলো হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর। জোর করে ব্যবসায়ীদের নিয়ে যাওয়ার কারণে চামড়া শিল্প নতুন করে সামনে এগোয়নি।
‘তার কারণ সাভারে রাস্তাঘাট তৈরি হয়নি। অবকাঠামো তৈরি হয়নি। ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আস্তে আস্তে এখন সব হয়েছে। খুবই শিগগিরই ইটিপি চালুও হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, মার্চ মাস থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দেখেছি সাভাবের ট্যানারিতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে না, কোয়ালিটি ফুল পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখছি আবার দূষিত পানি ও বর্জ্য বের হচ্ছে। ধলেশ্বরী নদী এবং এলাকা দূষণ হচ্ছে। আর তা হচ্ছে ট্যানারিগুলোর অতিরিক্ত পানি ব্যবহার কারণে।
অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করলে ট্যানারি মালিকদের পানি ব্যবহারের উপর কর বসানো হবে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেছেন, সিটিপি চালু হলে ট্যানারি মালিকরা আরও বেশি পানি অপচয় করবে। পানি অপচয় করলে পরিবেশ দুষণ হবে।
তাছাড়াও ইটিপি পরিচালনাসহ এই প্রকল্পে প্রফেশনাল কাউকে ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হাজারীবাগ থেকে সাভারে শিফট না হওয়ায় ট্যানারিতে ‘সলিড ওয়েস্ট’ মারাত্মক অবস্থা ধারণ করছে। কারণ এই ওয়েস্টগুলো দিয়ে হাজারীবাগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চিরুনী, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট পণ্য তৈরি করেন। এর ফলে সলিড ওয়েস্ট আর থাকতো না। এগুলো আমাদের সবারই ভুল।’
মহামারী করোনার ফলে ট্যুরিজম সেক্টরে ২২ শতাংশ পণ্য রফতানি কমেছে পরিসংখ্যান তুলে ধরে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মনজুর জানান, মহামারী করোনায় ট্যানারি খাতে গত বছরের চেয়ে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ রফতানি কমেছে।
তার কথার সূত্র ধরে সালমান এফ রহমান জানান, চামড়া খাতের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এ খাতের কাঁচামাল আমাদের সম্পদ। এই মুহুর্তে চীন এখন কর অব্যাহতি দিয়েছে। ভ্যালু এডিশন ৪০ শতাংশের নিচে আছে। ফলে চীনের বাজার ধরার বড় সুযোগ। এটাকে কাজে লাগাতে হবে।
২০২৪ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যেসব এলকায় ডিউটি ফ্রি-কোটা ফ্রি সুবিধা ছিলো এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এগুলা যাতে বন্ধ না হয় সেই ম্যাকানিজম করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সালমান এফ রহমান আরও জানান, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে এই খাতে সরকারের কর নীতি করতে হবে। প্রতিবছর যাতে এসআরও জারি করে পরিবর্তন না করা হয় সেই পরিকল্পনা করতে হবে। ফুটওয়ারকে আলাদা খাত হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন। তাহলে এ খাতও দ্রুত বিস্তার লাভ করেব। কিন্তু এক্ষেত্রে ভিয়েতনামের মত আমাদেরও কোনো খাতের জন্য ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া যাবে না।
এ সময় জাতীয় রাজস্ব র্বোডকে (এনবিআর) করের বোঝা না চাপিয়ে দিয়ে করের আওতা বাড়ানো পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা।
আনন্দবাজার/এফআইবি