করোনা মহামারিতে প্রায় সকল কিছুই থমকে গেলেও প্রকৃতি সতেজ হয়ে উঠেছে নিজের মতো। করোনাকালে সতেজ হয়ে উঠেছে বিশ্ব বৈচিত্রের অংশ সুন্দরবনও। পর্যটক কিংবা মৌয়ালদের পদচারণা কমায় করোনার এই সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে মৌচাক। এতে করে এ বছর বেড়েছে সুন্দরবনের মধুর উৎপাদন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতবারের তুলনায় সুন্দরবনে এ বছর ৪৭৮ কুইন্টাল বেশি মধু উৎপাদন হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ ও উৎস বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে মৌচাকের সংখ্যা। মৌয়লদের হানা না পড়ায় তা আকারে অনেক বেশি বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। যে কারণে বেড়েছে সার্বিক মধু উৎপাদন।
জানা গেছে, প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সুন্দরবনের মধু আহরণ। ৩০ জুন পর্যন্ত টানা তিন মাস মধু আহরণ চলে। বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে মধু আহরণ করতে সুন্দরবনে প্রবেশ করে মৌয়ালরা। এরপর বনের মধ্যে ঘুরে ঘুরে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়ে মধু নিয়ে লোকালয়ে ফিরে আসে তারা। এরপর ওই মধু নানা হাত ঘুরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আওতাধীন এলাকা থেকে ১২২০.৫০ কুইন্টাল মধু এবং ৩৬৬.১৫ কুইন্টাল মোম আহরণ করা হয়। এই সময়ে মধু থেকে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৭৫ টাকা এবং মোম থেকে তিন লাখ ৬৬ হাজার ১৫০ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে এই এলাকা থেকে ৭৪২.৫০ কুইন্টাল মধু ও ২২৯.৫০ কুইন্টাল মোম আহরিত হয়েছিল। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আসে সাত লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৫ টাকা।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন চালতেবুনিয়া গ্রামের ৬০ বছর বয়স্ক মৌয়াল ইসমাইল হোসেন জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সুন্দরবন থেকে তিনি মধু আহরণ করছেন। এ বছর মৌসুমে একটি নৌকাযোগে তাঁরা ১১ জন মধু আহরণ করতে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। টানা ১৫ দিন মধু আহরণ শেষে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। এভাবে এক মাসে দুই দফায় তিন মণ মধু আহরণ করেছেন তিনি। প্রতিবেশী একজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে তিনি মধু আহরণ করতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে ৫০০ টাকা কেজি দরে ওই দাদন ব্যবসায়ীর কাছেই আহরিত মধু বিক্রি করতে হয়েছে।
বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন অংশে মৌয়ালরা বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মধু আহরণ করলেও দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে মধুর প্রকৃত মূল্য পায় না মৌয়ালরা।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস