কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) স্থায়ী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও একজন অধ্যাপককে রেজিস্ট্রার পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চালানো হচ্ছে প্রশাসন।
বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই ২০১৮ এর ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্মরত রেজিস্ট্রার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদারকে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পদসহ লাইব্রেরিতে বদলি করে তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহেরকে রেজিস্ট্রার পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলে তাকে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সাধারণত, বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য এডিশনাল রেজিস্ট্রার বা ডেপুটি রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদে ৪-৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়/ সরকারি/ স্বায়ত্ত্বশাসিত/ স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ১২-১৫ বছরের প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। অথচ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপককে প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এতে প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোয় বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। তাছাড়া, প্রশাসনিক পদে শিক্ষককে বসিয়ে দেওয়ায় নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েও হতাশা আছে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের মাঝে।
এদিকে প্রাক্তন রেজিস্ট্রার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার নিজের বদলি ও কর্মজীবন প্রসঙ্গে বলেন, ‘উপাচার্য স্যার নিয়োগ পাওয়ার পরপরই আমাকে পদসহ বদলির আদেশ দিয়ে লাইব্রেরিতে যোগদান করতে বলা হয়। অথচ আমি রেজিস্ট্রার পদে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আমাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সঠিক কোনো কারণ বা অভিযোর আমার বিরুদ্ধে ছিলো না। আমি লাইব্রেরিয়ান না, আমার সে বিষয়ে জ্ঞান নেই, তবুও আমাকে পদসহ সেখানে বদলি করা হলো। এটি কিভাবে যৌক্তিক হয় তা আমার জানা নেই।’ রেজিস্ট্রার পদে থাকলে নিজের পছন্দের শিক্ষকদের পদ, প্রমোশন, বিদেশ যাত্রার সুবিধা করে দিয়ে শিক্ষক রাজনীতি করাটা সহজ হয় বলে অনেক শিক্ষকের এই পদের দিকে নজর থাকে বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ একজন অধ্যাপক ড. মোঃ সৈয়দুর রহমান। অধ্যাপক সৈয়দ বলেন, ‘যদি প্রাক্তন রেজিস্ট্রারের রিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকতো তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা যেত। তা না করে তাকে সরিয়ে লাইব্রেরিতে দেওয়া হলো যেখানে তার কোনো কাজ নেই। আর যাকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেয়া হলো, সেই অধ্যাপক তো বেতন পান অধ্যাপনার জন্য, প্রশাসনিক কাজের জন্য না। আমি মনে করি এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি, এটা কখনো হওয়া উচিত না।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের সিদ্ধান্তের লিখিত নোটিশটা আসুক। না আসলে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না।একজন স্থায়ী রেজিস্ট্রারকে সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের অধ্যাপককে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে (সাবেক রেজিস্ট্রার) অনেক অভিযোগ! তাই তাকে সরিয়ে নতুন একজনকে দায়িত্ব দিয়েছি এবং কাজে গতি এসেছে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আস্তে আস্তে পূরণ হবে সব।’
স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘দেখা যাক। আপাতত আমাদের কাজ ভালো হচ্ছে। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী রেজিস্ট্রারে কাজ চালানো হচ্ছে। সব জায়গায় নেগেটিভিটি খুঁজতে যেও না।’
আনন্দবাজার/এইচ এস কে/ এম এইচ