ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীপুরে অসময়ে ব্ল্যাক বক্স জাতের তরমুজ চাষে সফলতা

গাজীপুরের শ্রীপুরে অসময়ে মাচায় ঝুলিয়ে গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাক বক্স জাতের তরমুজ চাষ করে সফলতা লাভ করেছে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের ছাতির বাজার এলাকার আব্দুল হামিদ নামের এক যুবক। নতুন জাতের এই তরমুজ চাষ করে তিনি আর্থিকভাবে হয়েছেন স্বাবলম্বী। হামিদ বর্তমানে উপজেলার এক সফল মানুষের অনন্য উদাহরণ।

আব্দুল হামিদ নিজের উদ্যোগেই চাষ করেছেন এই দুই জাতের তরমুজ। স্থানীয় বাজারের গণ্ডি পেরিয়ে আব্দুল হামিদের আশা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির।সরেজমিন দেখা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাক বক্স জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন হামিদ। ১৭ শতাংশ জমিজুড়ে ঝুলছে ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের কালো ও হলুদ রঙের তরমুজগুলো। চারদিকে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা হলেও মাটিতে খড়ের বিছানা বিছিয়ে নয় তিনি মাচায় ঝুলিয়ে চাষ করেছেন এই তরমুজ। তরমুজকে কীটনাশকমুক্ত এবং সম্পূর্ণ অর্গানিক রাখতে তিনি নেটের ব্যাগে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ফলে ক্ষেতে তার এ তরমুজের আকৃষ্টতাও বেড়েছে। ঝুলিয়ে থাকার ফলে পানিতে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই।

নতুন এই পদ্ধতিতে তরমুজের ফলন ভালো দেখে উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা আসছে দেখতে। অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।স্থানীয় যুবক সারোয়ার জাহান সাগর বলেন, অসময়ে হামিদের তরমুজ চাষ নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন। কিন্তু চাষে ফলন ভালো এবং স্বাদ ভালো হাওয়ায় এখন অনেকেই চাষ করতে তার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। আমি নিজেও ভাবছি এ ফলের চাষ করবো।

তরমুজ চাষি মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ২০১৮ সালে ডিগ্রি পাস করার পর বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে হতাশ ছিলাম। আর্থিক অভাবের কারণে কিছুই করার সাহস পাচ্ছিলাম না। কম খরচে কিছু একটা করে অধিক লাভবান হওয়া যায় এমন চিন্তা সবসময় মাথায় কাজ করত। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ইউটিউব চ্যানেলে তরমুজ চাষের পদ্ধতি দেখে আগ্রহ বাড়ে। প্রথমে এ তরমুজ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করলে পরিবারের সদস্যরা আমাকে বাধা দেন। কিন্তু আমি কোনো বাধা না মেনে নিজের উদ্যোগেই ১৭ শতাংশ জমি তরমুজ চাষ করার জন্য তৈরি করি। সেখানে ৫টি বেড করে মাটির সঠিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে রাখি।

এরপর চলতি বছরের ২০ জুন হাইব্রিড গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাক বক্স জাতের বীজ রোপণ করি। এতে খরচ হয় মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা।বীজ রোপণের ৩০ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। ৩৫ দিনের মধ্যে গাছে প্রচুর ফুল ও কুড়ি আসে। বর্তমানে মাচার ডোগায় ডোগায় ঝুলে আছে ছোট-বড় শত শত তরমুজ।হামিদ বলেন, তরমুজের বাইরের রঙ হলুদ হলেও ভেতরের রঙ লাল। স্বাদের অন্যান্য জাতের তরমুজের মতোই লাগে। গাছ লাগানোর ৪০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই ফল বিক্রি করা যায়। এই তরমুজ যদি মাচায় চাষ করা যায় তাহলে এখান থেকে বেশি ফলন পাওয়া যায়।

অসময়ের এ তরমুজের ব্যাপক চাহিদা বাজারে। প্রতি কেজি তরমুজ খুচরা ১০০ টাকা ও পাইকারি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করি। ১৭ শতাংশ জমি থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, আব্দুল হামিদের এ সফলতায় উপজেলায় এ জাতের তরমুজ চাষের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এ জাতের তরমুজ মাত্র ৬০-৬৫ দিনেই ফলন শুরু হয়। অসময়ের হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তা ছাড়া কৃষক বেশ ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, নতুন জাতের হলুদ রঙের এই তরমুজ বেশি চাষ করা হয় আফ্রিকাতে। সম্প্রতি দেশের দিনাজপুর, নওগাঁ, রাজশাহীসহ বেশ কিছু জেলায় অল্প পরিসরে চাষ শুরু হয়েছে।

আনন্দবাজার/শাহী/মহিউদ্দিন

সংবাদটি শেয়ার করুন