করোনায় স্থবির হয়ে গিয়েছিল বইয়ের এলাকা বাংলাবাজার। ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে এই এলাকার প্রকাশনা সংস্থাগুলো খুলেছে। কিন্তু এত দিনের পরও ফেরেনি সেখানকার আগের কেনাবেচার গতি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থায় তাদের লোকসান গুনতে হবে প্রায় পাঁচ শত কোটি টাকা। এমন অবস্থায় খাদে পড়া প্রকাশনা শিল্প রক্ষায় তাদের মধ্যে চলছে হাহাকার। যদিও অনলাইনে বই বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো সঙ্কটের সময়ে বিক্রির হার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশ ও বিক্রেতা সমিতির হিসাব মতে গত কয়েক মাসে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা। শিগিগরই আর্থিক এ ক্ষতির পরিমাণ কমবে এমন কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না প্রকাশকরা।
বাংলাবাজারের বইয়ের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে লাখো মানুষের জীবিকা। ইতোমধ্যে তাদের অনেকে বেকার হয়েছেন। যারা এখনো টিকে আছেন, তারাও আছেন কাজ হারানোর আশঙ্কায়।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ জানান, সৃজনশীল বই বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের কাছে অর্থিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রতি বছর বইমেলায় মেলা কর্তৃপক্ষ বই বিক্রির যে অঙ্ক ঘোষণা করে বিক্রির টাকার সে অঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, করোনায় এ বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের লোকসান হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার।
তিনি জানান, বর্তমানে ব্যবসা খুলে দেয়া হলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারা-না-পারার বিষয়ে তারা সন্দিহান। কারণ গত বইমেলা শেষে দেশব্যাপী বইয়ের দোকানগুলোতে নতুন বই ছড়িয়ে দেয়া বা বিক্রি হয়ে ওঠেনি। এই বন্ধের কারণে প্রকাশনা ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়ে। যে সময়টায় সারা দেশে বই বাজারজাত করার কথা, সে সময় প্রকাশকদের বাজারজাতের পরিবর্তে বইগুলো গুদামজাত করতে হয়েছে। করোনা-উত্তরকালে সৃজনশীল বই কেনায় মানুষের আগ্রহ কতটা থাকবে, তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। আগামী বইমেলা পর্যন্ত এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নয়তো এ সম্ভাবনাময় খাত টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘উৎস প্রকাশন’-এর স্বত্বাধিকারী মোস্তফা সেলিম অশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে আগামী বইমেলায় পাঠকের আশানুরূপ নতুন বই প্রকাশ প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। যেহেতু আমাদের দেশে প্রতি বছর নির্দিষ্ট একটি মাসে বইমেলা হয় তাই প্রকাশকরা সাধারণত একটি বইমেলার পর পরবর্তী বইমেলার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এ বছর করোনার আঘাতে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে এ শিল্প বাঁচাতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন সত্তর দশকের শক্তিমান কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ। তিনি বলেন, সরকার সহযোগিতা করলেই আবারো ঘুরে দাঁড়াবে সৃজনশীল এ শিল্পটি। কারণ করোনা হঠাৎ করে এসেছে। ফলে এ অবস্থায় সঙ্কটে পড়া প্রকাশনা খাতে সহযোগিতায় সরকার চাইলেই এগিয়ে আসতে পারে। যেমন সরকারের যতগুলো উইং থেকে আগে বই কেনা হতো এগুলো চালু করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বই কেনার মাধ্যমেও সরকার প্রকাশকদের সহযোগিতা করতে পারে।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস