১৯৭৫ সালের পর থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় ভিন্ন আঙ্গিকে শোক পালন করে আসছেন পঞ্চগড়ের যামিনী বালা সেন। এবার মৃত্যু শয্যায় তিনি। তবুও তার নির্দেশনায় প্রতি বছরের মতো এবারও শোকের মাসে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ প্রার্থনার। কোন চাওয়া পাওয়া নেই তার। কেবল বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকেই বছরের পর বছর এই আয়োজন করে আসছে তার পরিবার।
একাত্তরে পাকিস্তানিরা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিলেও জন্মভূমির ভিটে ছাড়েনটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের পূর্ব শিকারপুর গ্রামের যামিনী বালা সেন। নানা নির্যাতন সহ্য করেও দেশের মাটি কামড়েই তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে বড় করেছেন। ছোট থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তার। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হলে মানসিক ভাবে গভীর আঘাত পান যামিনী। তারপর থেকেই প্রতি বছর পূজাঅর্চনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদদের জন্য প্রার্থনা করে আসছেন তিনি। শুরুতে নিজে নিজে করলেও ধিরে ধিরে তার পরিবারের সদস্যরা এসে তার সাথে যোগ দেয়। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কল্যাণ কামনায় প্রদীপ জ্বেলে দূর্বা ঘাস, ফুলসহ নানা উপকরণ দিয়ে নারায়ন পূজা করা হয়। পরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। পরিবারে সবাইকে নিয়ে এভাবেই বছরের পর বছর বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা জানায় যামিনী বালা। এবার তিনি মৃত্যু শয্যায়। জটিল রোগে ভুগছেন। বয়স আঁশি পেরিয়ে গেছে। মৃত্যু শয্যাতেও সন্তানদের বঙ্গবন্ধুর জন্য বিশেষ প্রার্থনা ও পূজা অর্চনার নির্দেশ দেন তিনি। সেই অনুযায়ী তার তিন ছেলে সত্যেন সেন, কমলাকান্ত সেন ও মংলা সেন সব আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভক্ত এই বৃদ্ধা জীবনে একবার মাত্র দূর থেকে শেখ হাসিনার দর্শন পেয়েছেন। মৃত্যুর আগে কাছ থেকে আরেকবার দেখবার শখ তার। এছাড়া অন্য কোন চাওয়া পাওয়া নেই তার। কিন্তু সেই চাওয়া হয়তো পূরণ হয়ে উঠবে না। তবু তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়েই ছবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশীর্বাদ জানিয়েছেন। সেই সাথে সন্তানদেরও এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এই বৃদ্ধা।
যামিনী বালা সেন বলেন, একাত্তরে বহু নির্যাতন হয়েছে আমাদের উপর। ঘরবাড়ি জ¦ালিয়ে দিয়েছে, গরু ছাগলসহ সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। তবুও জন্মভিটা ছেড়ে যাই নি। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি সকল ধর্মের মানুষকে সমান চোখে দেখতেন। তাই আমি তার পরিবারের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করে আসছি। বঙ্গবন্ধুর মতো তার মেয়ে শেখ হাসিনাও সুন্দরভাবে দেশ চালাচ্ছে। আমি তাকে আশীর্বাদ জানাই। যেন এমনভাবেই দেশ চালাতে পারেন।
যামিনী বালার ছেলে সত্যেন সেন (৫৬) বলেন, আমার মা শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যরকম ভক্ত। তিনি নিজেই নিজেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের মঙ্গল কামনায় পূজা অর্চনা করতেন। এখন আমরা প্রতিবছর মায়ের নির্দেশনায় এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছি। শোকের মাসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নারায়ন পূজা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
যামিনী বালার নাতি জগন্নাথ সেন (৩৫) বলেন, আমার ঠাকুরমা কাছ থেকেই আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা নিয়েছি। তিনি কোন কিছুই চান না। আরেক বার প্রধানমন্ত্রীকে দেখার শখ ছিলো তার। দুই বছর আগে ঠাকুরগাঁয় প্রধানমন্ত্রী আসলে ঠাকুরমা তাঁকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ্য থাকায় আমরা তাকে নিয়ে যেতে পারিনি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আশীর্বাদ জানিয়েছেন। যেন তার বাবার মতো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি আরও বলেন জোট সরকারের অবরোধের সময় গাড়ি চালাতে গিয়ে আমার উপর হামলা হয়েছিলো। একাত্তরে আমার পরিবারের উপর অনেক নির্যাতন গেছে। এখন আমরা ভাল আছি। নিরাপদে আছি।
আনন্দবাজার/শাহী/রায়হান