ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন ক্লাস নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

করোনার থাবায় নিস্তব্ধ পুরো বিশ্ব। তা থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। বন্ধ রাখা হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার পরেও থেমে নেই দেশের শিক্ষা কার্যক্রম। নেওয়া হচ্ছে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা। তবে এসব ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহীদুল ইসলাম আপন।

ছাবেকুন মোস্তফা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইন শিক্ষার পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাবেকুন মোস্তফা বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বর্তমান পৃথিবী যেন স্থবির হয়ে আছে। সৃষ্টি হয়েছে মহামারি। পৃথিবীর এই অচল অবস্থা বিরূপ প্রভাব ফেলছে শিক্ষাব্যবস্থায়। বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল, কলেজ ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এ ক্ষেত্রে আশার আলো অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা। স্বল্পব্যাপ্তিতে হলেও বাংলাদেশেও অনলাইন শিক্ষাপ্রদান কর্মসূচি চলছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশগ্রহনের পাশাপাশি নিজস্ব মতামত ও প্রকাশ করতে পারছে। তাছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে এগিয়ে রাখতে এই কার্যক্রম অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছি। তাই শিক্ষাব্যবস্থায় সেশনজট এড়াতে এখনি অনলাইনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।

মো: আশিকুর রহমান, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

এ বিষয়ে গণবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো: আশিকুর রহমান বলেন, অনলাইনে ক্লাস মোটেও আকর্ষনীয় নয়। বাড়িতে ছাত্র ছাত্রীরা এমনিতেই করোনা ভাইরাস এর আতঙ্কের মধ্যে আছে, এমন অবস্থায় তারা মানসিকভাবেও প্রস্তুত নয় ক্লাস করার জন্য। অন্যদিকে যে জুম সফটওয়্যারে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে তা সবার মোবাইলে সাপোর্ট করে না আবার সাপোর্ট করলেও লকডাউনের ভেতর শতশত টাকার ডাটা কেনা পরিবারের ওপর নতুন বোঝা। আমি মনে করি নেট সমস্যা, করোনা আতঙ্ক এবং গরীব ছাত্রদের কথা মাথায় রেখে এই অনলাইন ক্লাস বন্ধ রাখা উচিত কারন উপরিউক্ত সমস্যাগুলোর কারনে অনলাইনে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই যুক্ত হতে পারছে না। আর এমন অবস্থায় যদি ক্লাস ও পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা সেশনজট থেকে বাচবে ঠিকই কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সবার জন্য কখনই সম্ভব হবে না।

ফারহানা নওশিন তিতলী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা নওশিন তিতলী বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের চাকা নিয়ন্ত্রণহীন। ছোট্ট একটি ভাইরাসের কবলে পড়ে লাগাম হারিয়েছে গণমানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। সবকিছুর ন্যায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থাও। বাংলাদেশও এই দূর্যোগের বাইরে নয়।
অঘোষিত লকডাউনের ফলে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই দীর্ঘ বিরতিতে প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার অভাবনীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থার রাশ টানতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনলাইনে ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন সাড়া ফেলেছে তেমন কিছু বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। প্রথমত করোনা প্রাদুর্ভাবে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারে অর্থ সঙ্কট দেখা দিয়েছে এই অবস্থায় সকল শিক্ষার্থীর পক্ষে ব্যায়বহুল মেগাবাইট কিনে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের সবজায়গায় অনলাইন ক্লাস করার মতো পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে আশাবাদী।

আশিকুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় 

মন্তব্য করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ বন্ধের মধ্যে শিক্ষা-কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনলাইনে ক্লাস নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে যেহেতু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের আর বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারের আয়ের উৎস বন্ধ থাকায় সম্পূর্ণ সুফল ভোগ করা সম্ভবপর কিনা এই ব্যাপারে আমি সন্দিহান। তাই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হলে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট কিংবা স্বল্পমূল্যে ডেটার ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি।

ফাইজুল ইসলাম ফাহিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনার ইঙ্গিত দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইজুল ইসলাম ফাহিম বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র গ্রাম, মফস্বল, শহর থেকে উঠে আসা। তাদের কথাও ভাবতে হবে, ইন্টারনেটে উচ্চমূল্য, নেটওয়ার্ক অসুবিধা এসব সমস্যাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রধান বাঁধা। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত। মূলত এ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ব্যয়বহুল। শুধুমাত্র ছাত্র -শিক্ষক নয়, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সফল করতে এগিয়ে আসতে হবে সরকার, শিক্ষাবিদ, নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান, শিল্পপতি, বুদ্ধিজীবীসহ সচেতন মানুষ মহলকে। অবশ্য যত সহজে উপরের কথাগুলো বলা হয়েছে, এসবের বাস্তবায়ন এত সহজ না সকলের সহযোগিতা ছাড়া। শুধু নামে কার্যক্রম নয়, সকল ব্যাবস্থার বাস্তবায়ন করে সুন্দর শিক্ষা কার্যক্রম প্রয়োজন।

সুরাইয়া বিনতে হাবিব, হোম ইকোনোমিক্স কলেজ

এ বিষয়ে হোম ইকোনমিক্স কলেজের শিক্ষার্থী সুরাইয়া বিনতে হাবিব বলেন, বর্তমানে দেশের এই ক্রান্তিকালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বা পাঠদান কর্মসূচি চালু করেছে। যা শিক্ষার্থীদের কোয়ারেন্টাইনের মধ্যেও তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক এসকল অনলাইন ক্লাস করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পাঠ্যবই এবং সিলেবাস এগিয়ে রাখতে পারলেও অনলাইন ক্লাসের কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। যেমন অনেক প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন ক্লাস নেওয়ার জন্য এমন অর্থনৈতিক দুর্যোগকালে টিউশন ফি দাবি করছে। যে সকল শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে তারা এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছে আবার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই লকডাউনের সময় তাদের নিজ গ্রামে চলে যাওয়ার ফলে অনলাইন ক্লাস গুলোতে তারা যুক্ত হতে পারছেন না। আবার অনেকের ক্লাসের সময় এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ভাল না থাকায় ক্লাস এ যুক্ত হতে পারে না ফলে তারা তাদের. সিলেবাস পাঠ্য কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কে এম হিমেল, বেগম রোকেয়া বিশবিদ্যালয়

অনলাইন ক্লাসের কার্যকারিতা নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেএম হিমেল বলেন, তামাম বিশ্ব আজ করোনা মহামারির কাছে থমকে গেছে। করোনা পরিস্থিতি কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়ে ওঠে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের প্রথম শর্ত হলো স্মার্টফোন/ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার অবশ্যই থাকতে হবে দ্বিতীয়ত নেট কানেকশন। পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ, স্মার্টফোন থাকলেও গ্রামে গিয়ে তাদের নেট সংযোগ নেই। আর কিছু সংখ্যকের নেই ল্যাপটপ/স্মার্টফোন। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা শহরে বিভিন্ন টিউশনি করে লেখাপড়া চলাতো এখন নেই তাদের এই সীমিত আয়ের উৎসটুকুও।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন