করোনায় কত কিছইু বদলে গেছে। সেই সাথে বদলে গেছে ষষ্ঠ শ্রেনী পড়ুয়া ছাত্র মুসলিম উদ্দিন (১২) এর জীবন। যে বয়সে তার হাতে থাকবে স্কুলের বই কিন্তু তার পরিবর্তে হাতে টেবিল পরিস্কার এর কাপড় আর পাঁচটি একত্র করা পানিভর্তি গ্লাস। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের বৈড়াগিগছ গ্রামের দিনমুজুরের ছেলে মুসলিমউদ্দিন গিতালগছ দ্বী-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র মুসলিমউদ্দিন পেটের তাগিদে এখন হোটেল বয়।
করোনার কারনে সংসারে অভাব কিছুটা দূর করার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে গত একমাস ধরে হোটেল বয়ের কাজ করছেন স্কুল ছাত্র মুসলিমউদ্দিন। পরিবারের তৃতীয় সন্তান মুসলিমউদ্দিন। ভজনপুর বাজার হাইওয়ে রাস্তার পাশে অলি হোটেলে বাবা ছেলে একসাথে শ্রমিকের কাজ করছে।
জানা গেছে দুই মেয়ে সহ ষষ্ঠ শ্রেনী পড়ুয়া মুসলিমউদ্দিন এর বাবা সলিমউদ্দিন এর ছয় জনের সংসার । দুইবোন আর মুসলিমউদ্দিন গ্রামের কাছাকাছি গিতালগছ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। বড় বোন সুমি আক্তার (১৬) ঐ স্কুলে দশম শ্রেনীর ছাত্রী, মেজো বোন শিউলি আক্তার (১৫) একই স্কুলে নবম শ্রেনীতে পড়ালেখা করছে। আর মুসলিমউদ্দিন ২০২০ সালের জানুয়ারীতে ঐ স্কুলে ভর্তি হয়েছেন ষষ্ঠ শ্রেনীতে।
সরেজমিনে ভজনপুরের সেই হোটেলে গিয়ে দেখা যায় মুসলিমউদ্দিন পানি ভর্তি কয়েকটি গ্লাস একসাথে করে টেবিলে পানি পরিবেশন করছে। পেটের তাগিদেই হোটেলে কাজ করছি। আমি ক্লাস সিক্সে পড়ালেখা করি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে সংসারে অভাব চলছে। এজন্য বাবা ছেলে একসাথে হোটেলে কাজ করছি। বর্তমানে স্কুল বন্ধ বাবা একাই সংসারে কস্ট করছে তাই বাবার সাথে কাজ করতে এসেছি। বাড়িতে ভাল কিছু খেতে পারিনা। হোটেলের কাজ করতে আমার কস্ট হলেও দুইবেলা খেতে পারছি। কাদোঁ কাঁদো কন্ঠে মুসলিমউদ্দিন বললো বাবার ইচ্ছা আমি পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ হবো। কিন্তু অভাবের কারনে বাবার সেই স্বপ্ন কি পূরন হবে? পড়াশুনা করে বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা আমার। কিন্তু আমার বাবা যেদিন হোটেলে কাজ করবেনা সেদিন আমাদের বাসায় কোন খাবার তৈরি হয়না। আর ঈদে নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে চেয়েছে আমার হোটেলের মালিক আমার মামা অলি।
হোটেল মালিক অলি জানান আসলে করোনার কারনে তাদের বাড়িতে অভাব অনটন চলছে এজন্য পরিবারটিকে বাঁচাতে আমি বাবা ও ছেলেকে কাজে লাগিয়েছি। মুসলিমউদ্দিন আমার ভাগিনা তার সাথে বেতনের কোন চুক্তি হয়নি। বাবা ছেলে একসাথে আমার হোটেলে কাজ করছে। স্কুল খুললে আমি মুসলিমউদ্দিন কে বাড়ি পাঠিয়ে দিবো।
আনন্দবাজার/শাহী/রায়হান