ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

সাংবাদিকতায় ক্যাম্পাস বিট একটি গুরুত্বপূর্ন সংযোজন। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ও অর্জন সবার কাছে তুলে ধরা ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মূল লক্ষ্য। করোনার এই সময়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের কাজের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। করোনায় ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার কাজ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকদের অভিমত জানাচ্ছেন আমাদের প্রতিনিধি আহসান জোবায়ের।

আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের প্রধান কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক এবং শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খবরাখবর জানানো। করোনা মহামারির কারণে প্রায় সব ক্যাম্পাস সাংবাদিকই বাড়িতে অবস্থান করছেন। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাদের কাজের চাপ কমলেও দায়িত্ববোধ কমেনি। একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চালু থাকা অবস্থায় যেমন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ বা সমস্যাদি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন, তেমনিভাবে এই দুর্যোগকালীন সময়ে বাড়িতে থাকা অবস্থায় তাকে নিজের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো নিয়ে প্রতিবেদন করতে হবে। এটাই তার দায়িত্ব। আমি মনে করি, ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের প্রায় সবাই নির্লোভ এবং নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও করোনা মহামারির এই সময়কালে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন করেছি, এখনও করছি। পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপমেন্টের চেষ্টা করছি। সেজন্য করণীয় বিষয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

রবিউল আলম, অর্থ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

কঠিন সময়ে কর্মের সর্বোচ্চ মানসম্মত অবস্থান তৈরি করা সব পেশার মানুষের জন্যই টিকে থাকার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। সাংবাদিকতা পেশাও এর বাহিরে নয়। নয়া নয়া সমস্যার নয়া নয়া সমাধান এবং তার সাথের আনুষঙ্গিক বিষয়াবলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা সবসময় মানবসভ্যতাকে সাহায্যে করেছে। করোনার জন্য সৃষ্ট অচলাবস্থা নিয়েও অনন্য সম্মুখ যোদ্ধাদের মতোই মানুষের পাশে থেকে ভালো মন্দ বিচারের সুযোগ করে দিয়েছে সাংবাদিকতা। বিশ্ববদ্যালয়ের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাংবাদিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই নিজ জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এই সংকট মোকাবেলার। করোনাকালে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য মোকাবেলা করে সুন্দর আর সাবলীল সমাজ গঠনে মনোযোগী হওয়া সাংবাদিকতা শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা আমাদের সবারই দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। চলমান এই সংকটে সব পেশার মানুষরাই বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন আর সেখানে শিক্ষার্থীরা কোন অংশে কম ক্ষতিগ্রস্ত নয়। যেসব শিক্ষার্থীরা টিউশনি বা অন্য উপায়ে পড়াশোনা আর জীবন চালাতেন তাদের বর্তমান অবস্থা এবং সেই অনুসারে লিখনির মাধ্যমে জনমত গঠনেও আমাদের মনোনিবেশ করা উচিত।

আবির আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি মসৃণ সেতুবন্ধন হলো ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা। দীর্ঘদিন যাবৎ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ চালু না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াগুলো প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করাটা সহজসাধ্য নয়। বিভিন্ন সময় ছাত্রসংগঠনগুলো দাবি উত্থাপন করলেও ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো ছাড়া অন্যদের দাবির প্রতি তেমন গুরুত্বারোপ দিতে দেখা যায় না প্রশাসনকে। তবে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলা কিংবা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা অনেকটাই সহজসাধ্য। যৌক্তিকতার খাতিরে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবম‚র্তির কথা চিন্তা করেও অনেক সময় তা আমলে নেয় প্রশাসন। করোনা মহামারির কারণে প্রায় চার মাস যাবৎ বন্ধ আছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সংশ্লিষ্টদের সমস্যা কিংবা অভিযোগ কিন্তু থেমে নেই। অতীতে যেমন সাংবাদিকরা তাদের কলমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন সমস্যা নিরসনে এগিয়ে এসেছেন বর্তমান এই মহামারীর সময়ও তাদের বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। আমি মনে করি, একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের এটাই প্রকৃত দায়িত্ব এবং প্রত্যেকেই তা যথাযথভাবে পালন করছেন।

রায়হান উদ্দিন, সদস্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো দেশ বিপর্যস্ত। বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যেও থেমে নেই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। ঘরে থেকেও নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে ক্যাম্পাসের সব খবর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে তাঁরা। তবে করোনাকালে পর্বের তুলনায় ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের দায়িত্ববোধ বহুগুণে বেড়ে গেছে। লকডাউনের মধ্যে পত্রিকার হাউজগুলো থেকে ক্যাম্পাসের সংবাদ দিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা ছিল না। তারপরও ক্যাম্পাস সংবাদিকরা হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমস্যায় পড়লে সেটা শুনতে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো এবং সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা জানান দিচ্ছে তাঁরা প্রস্তুত সবধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে।

তৌসিফ কাইয়ুম, ক্রীড়া সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি

করোনা ভাইরাসের কারনে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। বাড়িতে থেকেও সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসের খোঁজ খবর রাখতে হচ্ছে। নিয়মিত পাঠাতে হচ্ছে রিপোর্ট। ক্যাম্পাস খোলা থাকা অবস্থায় সরেজমিনে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও এখন সেই সেই সুযোগ নেই। এখন তথ্যের জন্য মুঠোফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই অন্যতম ভরসা। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপডেট থাকতে হবে। অনেক সময় সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছাড়ানো আশঙ্কা থাকে। এজন্য তথ্য পাওয়ার পর অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন বেশি ক্রস চেক করে নিতে হবে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সকাল বিকাল তথ্যের খোঁজের দোঁড়াদোঁড়ি না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় কি ঘটছে তার খোঁজ রাখছি। নিয়মিত সোর্সদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। ব্যক্তিগত বলতে পরিবারের সদস্যদের সময় বেশি দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত ঈদ ছাড়া তিন ভাই এক হওয়ার সুযোগ হয় না কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তিনজনই এখন বাড়িতে। নিজেদের মধ্যে বেশ গল্প,আড্ডা হচ্ছে। এছাড়া মাঝে মাঝে দুই একটা সাহিত্য পড়ে সময় কাটছে।
তৌসিফ কাইয়ুম

আবু বকর রায়হান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদিক সমিতি

করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সাথে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরাও। ঘরবন্দী এই সময়টাতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা থেমে থাকেনি। করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা কোথাও মেসভাড়া নিয়ে সংকটে পড়েছে, আবার অনলাইন ক্লাসে সমস্যায় পড়েছে অথবা টিউশনি হারিয়ে কষ্টে থাকা এমন কেউ বাদ যাচ্ছে না তাদের কলম থেকে। করোনার মধ্যে ঘরে বসে থেকেই পত্রিকায় লিখে কিংবা ফোনে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের কলম সৈনিকেরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সম্ভাবনা থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের সব বিষয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকের আপডেট থাকা চাই। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সীমিত পারিসরে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন অসঙ্গতি ও ক্যাম্পাসের উন্নয়ণ কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে। সবমিলিয়ে করোনার সময়ে অন্যসকল শিক্ষার্থীর মত ঘরে অবস্থান করলেও ক্যাম্পাস সাংবাদিককে ঘরে থেকে সাংবাদিকতার দায় থেকে কাজ চালু রাখতে হবে।

আনন্দবাজার/শাহী/জোবায়ের

সংবাদটি শেয়ার করুন